তবে স্নায়ুতন্ত্রের জন্য এগুলো হুমকি।
এদের কারণে মনযোগ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, চিন্তাশক্তি সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দ্বিধাগ্রস্ততা বা ‘ব্রেইন ফগ’ হল সেই
পরিস্থিতি যখন একজন মানুষ একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না। মস্তিষ্কের জন্য
যথেষ্ট গুরুতর এই সমস্যার প্রভাব আমাদের শারীরিক ও মানসিক দুয়ের ওপরেই বর্তায়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনের
আলোকে জানানো হলো এবিষয়ে বিস্তারিত।
ব্রেইন ফগ কী?
কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ
করার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে ‘ব্রেইন ফগ’ যা মস্তিষ্কের মারাত্মক সমস্যাগুলোর মধ্যে
অন্যতম। মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতাকে দুর্বল করে, মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত করে এবং যেকোনো
কাজেই দ্বিধাগ্রস্ত করে এই সমস্যা। মনযোগ ধরে রাখাও দুষ্কর হয়ে ওঠে, স্মৃতিশক্তি দুর্বল
হয়, চিন্তার ধারা হয় এলোমেলো।
কারণ
অভ্যন্তরীন বিভিন্ন সমস্যার বহিপ্রকাশ
হল এই ‘ব্রেইন ফগ’। এই সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে আছে,
ঘুমের অভাব:
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করে না, এমনটা নিশ্চয়ই টের পান। যে কোনো
জিনিস শেখা, বোঝা কঠিন হয়ে ওঠে, যা মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতার তীক্ষ্ণ না থাকার ফল।
আর এজন্যই প্রতিদিন আট থেকে নয় ঘণ্টার ঘুম আবশ্যক।
মানসিক চাপ ও অস্বস্তি: প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে মানসিক অবস্থায় অবনতি হবে
এমনটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়। ফলে শারীরিক
ও মানসিক দুই দিক থেকেই দুর্বল হয়ে পড়েন। এখান থেকেও সৃষ্টি হতে পারে মানসিক অবসাদ
ও ‘ব্রেইন ফগ’।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের ওপর মানসিক স্বাস্থ্য অনেকটা নির্ভরশীল।
তাই খাদ্যাভ্যাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টির সরবরাহ না থাকলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কার্য
সম্পাদন করতে পারবে না, ফলে দেখা দিতে পারে ‘ব্রেইন ফগ’।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: কিছু হরমোনের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণেও ‘ব্রেইন ফগ’ দেখা দিতে
পারে। পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সম্ভব একই কারণে।
একইভাবে কিছু হরমোনের মাত্রা কম থাকার কারণেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে
বলা যায় ‘ইস্ট্রোজেন’ হরমোনের কথা। রজঃবন্ধ হওয়া নারীর শরীরে এই হরমোনের মাত্রা কম
হলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যহানী ঘটে।
ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া: বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘ব্রেইন ফগ’ দেখা
দেয়। তাই এমন পরিস্থিতি অনুভূত হলে চিকিৎসকের সঙ্গে ওষুধ সম্পর্কে আলাপ করা উচিত।
রোগের কারণে:
মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয় কিছু রোগের কারণেও। সংক্রমণ, রক্তে শর্করা মাত্রা কমে যাওয়া
ইত্যাদি যেসব রোগের কারণে দেখা দেয় সেগুলো থেকেই ‘ব্রেইন ফগ’ সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা, ‘হাইপোথাইরয়েডিজম’ ইত্যাদি এমন রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
করণীয়
অন্যান্য সকল সমস্যার মতো ‘ব্রেইন ফগ’য়ের
সমস্যা সমাধান করার আগে তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কোনো রোগের কারণে এমনটা হলে চিকিৎসকের
পরামর্শ মাফিক পরিপূরক পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে হবে। পাশাপাশি শরীরচর্চার দিকেও মনযোগ
দিতে হবে।
অন্যান্য ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত
শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি মাধ্যমে ‘ব্রেইন ফগ’ সারিয়ে তোলা সম্ভব।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক
‘কোভিড-১৯’য়ের প্রভাব মস্তিষ্কের ওপর
পড়ে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রায় ৫৮ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি
‘কোভিড-১৯’ রোগীর মাঝে মানসিক দ্বিধাগ্রস্ততা দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের পাশাপাশি বিভিন্ন
ওষুধের প্রভাবও এখানে দায়ী হতে পারে। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিয়েই নিশ্চিত সিদ্ধান্তের
পৌঁছানো সম্ভব।
আরও পড়ুন