জাতীয় নির্বাচক হিসেবে তার নিয়োগের খবর জানা গেছে কিছুদিন আগেই। খেলোয়াড়ি জীবনের পরিণতি চূড়ান্ত হয়ে যায় তখনই। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো শনিবার। স্বীকৃত ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতম বোলার, ঘরোয়া ক্রিকেটের নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক, আব্দুর রাজ্জাক এখন সাবেক ক্রিকেটার।
২০০২ সালের জানুয়ারিতে যশোরে জাতীয় লিগের ম্যাচে খুলনার হয়ে সিলেটের বিপক্ষে অভিষেক স্বীকৃত ক্রিকেটে। এরপর ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট রাঙিয়ে অর্জনে টইটম্বুর ক্যারিয়ার নিয়ে শেষ করলেন পথচলা। গত ১৬ মার্চ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের হয়ে ম্যাচটিই হয়ে রইল তার ক্যারিয়ারের শেষ।
সেই ১৩ বছর বয়সে বিকেএসপি থেকে স্বপ্নের পথে হাঁটা শুরু। এরপর ক্রিকেটের বিভিন্ন ধাপে দুই যুগের বিচরণ। ক্রিকেটার ছাড়া অন্য কোনো পরিচয় এতদিন ছিল না। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ৩৮ বছর বয়সী ক্রিকেটারের প্রতিক্রিয়ায় মিশে রইল আবেগের রেশ।
“গতকাল পর্যন্ত আমি বলতে পেরেছি আমি ক্রিকেট খেলোয়াড়, এখন থেকে বলতে হবে অন্যকিছু…যা আমার পেশা। হয়তো জিনিসটা সহজে বলতে পারছি, তবে আমার জন্য এত সহজ নয়। ঘোরের মধ্যে আছি এখনও…।”
“১৯৯৪ সাল থেকে ক্রিকেটের মধ্যে, তখন বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছি। সেটাকে বিদায় বলা…একটা সময় আসলে প্রত্যেক মানুষকেই এক কাজ থেকে অন্য ভূমিকায় যেতে হয়। তারপরও আবেগ বলে যেহেতু একটা কথা আছে, আমার মধ্যে সেটা খুব কঠিনভাবে কাজ করছে। খুব ভালোভাবে কিছু বলা, গুছিয়ে বলা আমার জন্য একটু কঠিন।”
অবসরে গেলেন তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটে একগাদা রেকর্ডকে সঙ্গী করে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬৩৪ উইকেট তার, আর কারও নেই ৫০০ উইকেটও। ইনিংসে ৫ উইকেট ৪১ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ১১ বার, সবই রেকর্ড। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪১২ উইকেট দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ১৭ রানে ৭ উইকেট দেশের হয়ে সেরা বোলিং কীর্তি।
সব মিলিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে এক হাজার ১৪৫ উইকেট তার। এক হাজারও নেই বাংলাদেশের আর কারও। রানও করেছেন সাড়ে চার হাজারের বেশি।
রেকর্ড আরও বেশ কিছু আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এমনকি ব্যাট হাতেও আছে রেকর্ড, ওয়ানডেতে দেশের দ্রুততম ফিফটি! সব মিলিয়ে ১৩৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, ২৮০ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ ও ৯০ টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ার।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থমকে ছিল ২০১৪ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর থেকে। পরে ২০১৮ সালে নাটকীয়ভাবে ফিরে একটি ম্যাচ খেলেন। সেটিই শেষ।
জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হওয়া নিয়ে আক্ষেপ করেছেন তিনি নানা সময়ে বহুবার। তবে বিদায় বেলায় বললেন তৃপ্তির কথাই।
“আমার পুরো ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো হতাশা নেই, এটা নিয়েও (অবসর) নেই। শুরু যেভাবে হয়েছে আমি খুশি ছিলাম। মাঝখানে যেমন চলেছে তাতে খুশির চেয়েও বেশি। আর শেষ যেভাবে হচ্ছে, তাতেও আমি খুশি।”
জাতীয় দলে অনেক দিন থেকে ব্রাত্য থাকলেও ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট তিনি খেলেছেন প্রচণ্ড আবেগ ও ভালোবাসা দিয়ে। পারফর্মও করেছেন দুর্দান্ত। সবশেষ মৌসুমেও তার শিকার ছিল ৫৩ উইকেট। নির্বাচক না হলে অনায়াসেই খেলে যেতে পারতেন আরও।
জাতীয় লিগে প্রিয় খুলনার হয়ে কিংবা বিসিএলে দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে আর মাঠে নামতে না পারা তাকে পোড়াবে। তবে স্বস্তি খুঁজবেন তিনি সুখস্মৃতিগুলোয় ডুব দিয়ে।
“মিস করার কথা যদি বলেন…আমার এই ক্যারিয়ার জীবনের সবচেয়ে বিশেষ জিনিস এটা (প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট)। এটা আসলে ভোলার মতো নয়। প্রত্যেক ধাপে ধাপে মনে পড়বে…মিস করব না ঠিক, স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মিস তখন করতাম যদি জোরপূর্বক অবসর হতো। এটা জোরপূর্বক নয়, আমারই সিদ্ধান্ত।”