মামলাটির পুনর্বিচার করতে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসিফের করা লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) গ্রহণ করে রোববার তাকে জামিন দিয়েছে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আসিফ প্রিসলির আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্ট মামলাটির বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে পুনর্বিচারের যে নির্দেশ দিয়েছিল তার বিরুদ্ধে আসিফ প্রিসলির লিভ টু আপিল গ্রহণ করে তাকে জামিন দিয়েছে।
“আপিল শুনানি সাপেক্ষে তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এ মামলার বাকি আসামিরা জামিনে আছেন। ফলে তাকে জামিন দিয়ে বাকি আসামিদের লিভ টু আপিলের সঙ্গে একীভূত করে দিয়েছে। এক সঙ্গে শুনানি হবে সবগুলোর।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্দশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাতের ২০১০ সালে আসিফ প্রিসলির সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ২০১৫ সালে ২৯ মার্চ শ্বশুর বাড়িতে মারা যান সিফাত। তখন তার পরিবার থেকে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয় স্বামী আসিফের বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত করা হয়। ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয় সিফাত আত্মহত্যা করেছেন।
কিন্তু ওই বছরের ২ এপ্রিল সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।
এরপর আদালতের নির্দেশে সিফাতের লাশ কবর থেকে তুলে রংপুর মেডিকেলে আবার ময়না তদন্ত করা হয়। দ্বিতীয় ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিফাতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।
এরপর পুলিশ তদন্ত শেষে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে সিফাতের স্বামী আসিফ প্রিসলি, আসিফের বাবা মো. রমজান হোসেন, মা নাজমুন নাহার ও প্রথম ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমানকে আসামি করে ২০১৬ সালের ২২ মার্চ অভিযোগপত্র দেয়।
মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পর এই আদালতেই ২০১৬ সালের ১১ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
বিচার শেষে একমাত্র আসিফকে (সিফাতের স্বামী) দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় আদালত। রায়ে অন্য আসামিদের খালাস দেওয়া হয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আসিফ এবং বাদিপক্ষ হাই কোর্টে আলাদা আপিল করে। বাদিপক্ষের আপিলটি ছিল আসিফের সাজা বাড়াতে। আর আসিফ আপিল করে খালাস চেয়ে।
উভয় পক্ষের আপিল শুনানির পর গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর রায় দেয় হাই কোর্ট। রায়ে দণ্ডবিধির পরিবর্তে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আইনে তিন মাসের মধ্যে বিচার শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া তিন আসামিকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
পাশাপাশি বলে দেওয়া হয়, এই তিন আসামি আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে এবং তিন মাসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ না হলে সংশ্লিষ্ট আদালত যেন তাদের জামিন আবেদন বিবেচনা করে।
হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন আসিফ প্রিসলি। তার শুনানির পরই আপিলের অনুমতি দিয়ে তাকে জামিন দেয় সর্বোচ্চ আদালত।