প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,
“শীতে সমুদ্র শান্ত থাকে। শীত মৌসুমে আমরা সি-ক্রুজ চালু করতে পারি।”
মালদ্বীপের হাই কমিশনার শিরুজিমাথ সামির বুধবার সৌজন্য সাক্ষাত
করতে গণভবনে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাকে এ কথা বলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের জানান,
রোহিঙ্গা
সঙ্কট, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য,
শিক্ষা, করোনাভাইরাস
মহামারীসহ
বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে মালদ্বীপের আগ্রহের কথা জানিয়ে হাই
কমিশনার বলেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে চাই।”
এ সময় বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন,
“ফিশারিজ ছাড়াও আমাদের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য,
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আছে। এগুলোর বিষয়েও মালদ্বীপের উদ্যোক্তারা বিবেচনা করতে পারে। সিরামিক,
ওষুধ, তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরেও মালদ্বীপ বিনিয়োগ করতে পারে।”
মালদ্বীপের রাজধানী মালের পাশে নতুন শহর গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে সেখানে বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানান হাই
কমিশনার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গভীর সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ আহরণে মালদ্বীপের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা বিনিময়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
মালদ্বীপের হাই কমিশনার বলেন,
বাংলাদেশের স্বাধীনতার
সুবর্ণ জয়ন্তী
উপলক্ষে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সফরের সময় এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক হতে পারে।
কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশে সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, “আমাদের কৃষি পণ্য আছে, কৃষি উৎপাদন দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
মহামারীর
সঙ্কটের মধ্যে বিপাকে পড়া মানুষের মধ্যে প্রচুর খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন,
“করোনার মধ্যে কয়েকটা বন্যা হওয়ার কারণে আমাদের কিছুটা খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে।”
মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে
পড়তে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে আমরা অনেক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ, মেডিকেল কলেজ,
এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়,
এগুলো প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানে মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারে।”
পর্যটন
বিষয়ে লেখাপড়া করতে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মালদ্বীপে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশটির হাই কমিশনার বলেন, “মালদ্বীপ পর্যটনে ভালো। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সেখানে পর্যটন বিষয়ে পড়াশোনা করতে যেতে পারে।”
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে পড়ছে। তাদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার
বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শিরুজিমাথ সামির।
প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন,
“আমরা প্রথমে শিক্ষকদের টিকা দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে তাদেরও টিকা দেওয়া হবে।”
মালদ্বীপে
বসবাসরত বাংলাদেশি কর্মীদেরও টিকার
আওতায় আনার অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের
কর্মীরা মালদ্বীপের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন মন্তব্য করে দেশটির হাই কমিশনার বলেন, তার সরকার সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের টিকা দেওয়া শুরু করতে যাচ্ছে।
মালদ্বীপের হাই কমিশনার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন
নেতৃত্বের
প্রশংসা করেন।
তিনি
রোহিঙ্গাদের
একটি অংশকে কক্সবাজার থেকে ভাষাণচরে স্থানান্তরে ‘খুবই ভালো উদ্যোগ’
হিসেবে বর্ণনা করেন বলে উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানান।
রোহিঙ্গাদের ভাষাণচরে স্থানান্তর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
“তারা খুব অমানবিক পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে বসবাস করছিল। সেখানে বন এবং পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছিল। তাদের জন্য আমরা আরও ভাল ব্যবস্থা এবং আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি । আমরা পুরো এলাকাটাকে ডেভেলপ করব।”
মহামারী
মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা ও বিভিন্ন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন মালদ্বীপের হাই
কমিশনার।
শেখ হাসিনা বলেন, “করোনায় সারা বিশ্বকে ভুগতে হয়েছে। সেখানে আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি।”
মহামারীর
সঙ্কট মোকাবেলায় নৌবাহিনীর জাহাজে
করে একশ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী,
ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম মালদ্বীপ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
এই সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হাই
কমিশনার বলেন, “খুব কঠিন সময়ে মালদ্বীপকে অনুদান দিয়েছিল বাংলাদেশ।”
প্রধানমন্ত্রী তকে বলেন,
“বন্ধুপ্রতীম দেশের প্রতি এটা আমাদের দায়িত্ব।”
হাই
কমিশনারের মাধ্যমে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাক্ষাতের সময় অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া,
প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।