বৃহস্পতিবারও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটির অনেকগুলো শহরে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচি দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কোথাও কোথাও পুলিশকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে। রাজধানী নেপিডোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের সরাতে জলকামান ব্যবহার করেছে। উত্তরের একটি শহরে ব্যবহৃত হয়েছে ক্যাটাপুল্ট।
অভ্যুত্থানবিরোধী টানা কর্মসূচি ও ধর্মঘটে মিয়ানমারের অনেকগুলো সরকারি কার্যালয় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
নতুন নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে বেসামরিক নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সামরিক জান্তা সরকারি কর্মচারীদের কাজে ফিরতে নির্দেশ দিয়েছে। যারা যারা নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছে তারা।
“আমি স্বৈরতন্ত্রে ঘুম থেকে জেগে উঠতে চাই না। আমরা চাই না বাকি জীবন ভয়ের মধ্যে থাকতে,” বলেছেন কো সোয়ে মিন নামের এক বিক্ষোভকারী।
মিনের মতো হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বৃহস্পতিবার ইয়াংগনে জড়ো হয়ে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
বৃহস্পতিবার শহরটির সুলে প্যাগোডার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছে একাধিক রাস্তার একটি সংযোগস্থলেও অসংখ্য প্রতিবাদকারীকে জড়ো হতে দেখা গেছে।
মিয়ানমার এর আগেও প্রায় অর্ধশতক সেনা শাসনে ছিল। সেসময়কার বিক্ষোভগুলোতে নিয়মিত রক্তপাতের ঘটনা ঘটলেও এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রতিবাদকারীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি এবং আইন অমান্যের ডাক ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা নেওয়া সামরিক জান্তাকে বেশ বিপাকেই ফেলেছে।
বৃহস্পতিবার ইয়াংগনে অনেক চালককেই শম্বুকগতিতে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে। আগের দিন চালকরা বিভিন্ন সড়ক ও সেতুতে গাড়ি ফেলে রেখে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করেছিল।
“সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসে যেতে দেরি হলে বা পৌঁছাতে না পারলে খুব খুশি হব আমি,” বলেছেন ‘ধীরে গাড়ি চালাও’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মিন।
মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বিক্ষোভকারীরা অভ্যুত্থানে আটক দুই কর্মকর্তার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করেছেন। রাজধানী নেপিডোতে পুলিশ লাইনের দিকে এগুতে থাকা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার হয়েছে জলকামান।
উত্তরাঞ্চলীয় শহর মেকিনাতে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ক্যাটাপুল্ট ব্যবহার করলে উত্তেজনা দেখা দেয় বলে সেখানকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন।
“তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা বা সংবিধান অনুযায়ী কাজ করছে না। তারা সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করছে,” বলেছেন সুত সেং হাতোই নামের এক বিক্ষোভকারী।
বিক্ষোভ দমনে শক্তি প্রয়োগ প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছে এখন আইন অমান্য ক্যাম্পেইন বন্ধ করাই বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
‘বিক্ষোভে প্ররোচনা দেওয়ার’ অভিযোগে বুধবার তারা চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, গায়কসহ ৬ সেলিব্রেটির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।