ক্যাটাগরি

কুড়িগ্রামে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে কাণ্ডে ভুগছে নাগরিকরা

এক অনুসন্ধানে কুড়িগ্রাম জেলার ৭৬ জন নাগরিকের অনলাইন জন্ম নিবন্ধনে এমন ভুল ধরা পড়েছে। এতে কয়েক বছর ধরে ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে এসব নাগরিকদের।

এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়ন পরিষদের কোড নম্বরে রেকর্ড হয়েছে। কয়েকটি জন্ম সনদে আবার নাম ও ঠিকানা ভুল দেখা গেছে।

ভিন্ন উপজেলার কোড এবং নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের বাসিন্দাকে দেওয়া হয়েছে জন্ম সনদ। এছাড়া বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নে একাধিক ব্যক্তির নামে রয়েছে দুইটি করে জন্ম সনদ।

এতে ৭৬ জন নাগরিকের নাম, বাবা-মার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ঠিক রেখে তাদের জন্ম নিবন্ধন নম্বর, নিবন্ধনের তারিখ এবং সনদ ইস্যুর তারিখ পরিবর্তন করে রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের তথ্য লিপিবদ্ধ দেখানো হয়েছে।

রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নে এসব নাগরিকরাও জানেন না তাদের তথ্য ভূরুঙ্গামারীর বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে লিপিবদ্ধ রয়েছে। দিনের পর দিন অনলাইনে এমন ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখেননি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বাসিন্দা নাছিমা খাতুনের বাবা নওশাদ আলী বলেন, আমার মেয়ের জন্ম নিবন্ধন সনদ ছিনাই ইউনিয়ন থেকে তুলেছি।

“পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, রাজারহাটে ২০১৯ সালে জন্ম নিবন্ধন করা হলেও ২০১৭ সালের রেকর্ডে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নে আমার মেয়ের নাম-ঠিকানাসহ আরেকটি জন্মনিবন্ধন রেকর্ড হয়েছে।

“কীভাবে এমনটি ঘটল আমি জানি না। আমি বা আমার পরিবারের কেউ কখনো ভূরুঙ্গামারী যাইনি।”

নাছিমা খাতুনের মা আলতা বেগম জানান, তার মেয়ের বিয়ের সময় জন্ম নিবন্ধন ছিনাই ইউনিয়ন থেকে নেওয়া হয়েছে।

“আমরা এই ইউনিয়নের বাসিন্দা।”

তাদের ছিনাইয়ের ঠিকানা কীভাবে ভুরুঙ্গামারীতে গেল তা নিয়ে বিস্মিত প্রকাশ করে তিনি জানান,  একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী রাহেনা বেগমেরও।

তিনি বলেন, “ছিনাই ইউনিয়ন থেকে আমার মেয়ে শিরিনা ও ছেলে আনোয়ারুলের জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছি।“

কীভাবে তাদের ঠিকানা ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় গেছে তা নিয়ে শঙ্কা তার।

ছিনাই ইউনিয়নের অপর বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমি ছিনাই বা বঙ্গসোনাহাট থেকে কোনো জন্ম নিবন্ধন তুলিনি। আমি ভোটার কার্ড ব্যবহার করি।

“কীভাবে বঙ্গসোনাহাটে আমার নামে জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু হলো সেটাতো জানা নেই।”

এদিকে, বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা শ্রী শংকর লাল রবি দাস জানান, বছর তিনেক আগে এই ইউনিয়ন থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ তুলেছেন।

“এখন ভোটার আইডিতে বয়সের সমস্যার কারণে আমার জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে আমার জন্ম নিবন্ধন সনদ তুলতে এসে দেখি আমার নাম নেই। আমার নামের জায়গায় সুলতানা, আর ঠিকানা দেখাচ্ছে ছিনাই, রাজারহাট উপজেলার।

“কয়েকদিন ধরে শুধু ঘুরতেছি। কোনো লাভ হয়নি।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রামে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়ন পরিষদে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৭৬ জন নাগরিকের জন্ম সনদের প্রকৃত তথ্যে ভুল বের হয়েছে। তাদের নাম, ঠিকানার পরিবর্তে পার্শ্ববর্তী রাজারহাট উপজেলার ছিনাই এবং সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি এবং লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার নাগরিকদের তথ্য উঠে আসছে অনলাইনে।

এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের সচিব মকবুল হোসেন জানান, উপজেলা এবং ইউনিয়ন কোড ভিন্ন হলেও জন্ম সনদ ছিনাই ইউনিয়নের প্রিন্টে নিজের এবং চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর দেখে হতবাক হয়েছেন তিনিও।

তিনিও জানেন না কীভাবে ঘটেছে এমন ঘটনা।

২০২০ সালে বঙ্গসোনাহাটে ইউনিয়ন সচিব হিসেবে যোগ দেন ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের সচিব রফিকুল ইসলাম।

রফিকুল বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে জন্ম-মৃত্যু অন লাইনের পাসওয়ার্ড পাওয়ার পর ৭৬ জন নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন তথ্যের অসংগতি দেখতে পাই।

“বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানের নজরে আনায় রোষানলে পড়তে হয় আমাকে। ফলে প্রশাসনকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাই।”

এদিকে সাবেক এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটলেও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাজান আলী মোল্লা কিছুই জানেন না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

তবে আগের সচিবদের উপর দোষ চাপান। বর্তমান সচিবের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর তিনিও জেলা প্রশাসককে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।