ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজে ২-০তে হারার পর থেকে বিসিবি প্রধানের অনেক কথা শোনা যাচ্ছে নিয়মিতই। সেটির ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ক্রিকেটারদের করোনাভাইরাসের টিকাদানের আয়োজনে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন দেশের ক্রিকেটের সাম্প্রতিক বিপর্যয় নিয়ে।
টেস্ট ক্রিকেট যদিও সবচেয়ে কঠিন সংস্করণ এবং বিশেষত্ব আলাদা, বিসিবি সভাপতি তবু বুঝে উঠতে পারছেন না, সীমিত ওভারে ভালো করলেও কেন টেস্টে ভালো করতে পারছে না দল। বুধবার নিজ বাসভবনে বিসিবি প্রধান বৈঠক করেন বোর্ড পরিচালক ও তিন সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম ইকবালের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার কোচিং স্টাফের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানালেন তিনি।
“বাংলাদেশ দলের যে খেলা দেখেছি আফগানিস্তানের সঙ্গে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টে, এই খেলা বাংলাদেশ দলের খেলা মনে হয় না। কারণ এরাই যখন ওয়ানডে খেলছে, টি-টোয়েন্টি খেলছে, তখন পুরোপুরি আলাদা। তখন তারা ভালো খেলছে। তাহলে টেস্টে সমস্যা কোথায়? ওদের সঙ্গে বসার পেছনে কারণ ছিল, প্রত্যেকের কাছ থেকে শুনতে চাচ্ছি, সমস্যাটা কোথায় বলে মনে করে।”
“তবে আমি খুশি যে ওরা যেটা বলছে এবং আমাদের ধারণা যেটা ছিল যে সমস্যা কোথায়, বেশির ভাগই মিলে যাচ্ছে। ৯০ শতাংশই মিলে যাচ্ছে। আজকে কোচিং স্টাফদের সঙ্গে সভা আছে। ওদেরকেও জিজ্ঞেস করব সমস্যা কোথায়। এরপর আমরা ওদেরকে বলব সামনের দিনগুলোয় কী করতে হবে।”
এই বৈঠকগুলোর আলোচনার সারমর্ম কিছুটা তুলে ধরে নাজমুল হাসান বললেন, আলোচনা থেকে অনেক কিছু তিনি বুঝতে পেরেছেন।
“সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা ও কৌশল যা হচ্ছে, আগের সঙ্গে কোনো মিল আমি পাচ্ছি না। আমি জানতে চাচ্ছিলাম, কে পরিকল্পনা করছে, কে কৌশল তৈরি করছে, কেন করছে। ওরা বলল, ‘এই জায়গায় সমস্যা।’ তখন সঙ্গে সঙ্গে জানতে চাচ্ছি, ‘এটা হলো কেন?।’ আগে তো সবকিছু তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতো। এখন নিজেরা নিচ্ছে, তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
“এইখানটায় দেখতে গিয়ে অনেক কিছু দেখা হচ্ছে। যারা যে সমস্ত দায়িত্বে আছেন, প্রত্যেককে বলা হয়েছে…উদাহরণস্বরূপ অপারেশন্সে যারা আছেন, সিলেকশনে যারা আছে, প্রত্যেকের যে দায়িত্ব, একটা কাজ করে দিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। ওদের আরও বেশি সম্পৃক্ত থাকা নিয়ে আলাপ হয়েছে।”
বিসিবি সভাপতির মতে, দলের সঙ্গে তার যোগাযোগে একটি বড় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, যেখানে বড় সমস্যা হচ্ছে।
“ইনফরমেশন গ্যাপ এত হচ্ছে কেন, এটা নিয়ে আলাপ হয়েছে, যেন এটা মিনিমাইজ করা যায়। আগে তো এই সমস্যা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, আগে খালেদ মাহমুদ সুজন আমাদের ম্যানেজার ছিল। দল ও বোর্ডের মধ্যে সংযোগ ছিল সে। কোচের সঙ্গে কী হচ্ছে না হচ্ছে, আমরা সবসময় জানতে পারতাম। আমি অন্তত জানতে পারতাম কী হচ্ছে না হচ্ছে। এখন কিন্তু আমি জানি না। মাঠে নামার পর জানতে পারি। বিরাট একটা কমিউনিকেশন গ্যাপ তো হচ্ছেই।”
“মাঠে কে নামবে, কে কত নম্বরে খেলবে, এগুলো তো আগে জানতাম। এখন তো জানি না। নামার পরে দেখছি। কয়েকবার টিভিতে বলেছি, আমি জানি না। আমাকে যেটা বলা হয়, সেটা হয় নাই। ভারতে একটি খেলায় টসে জিতলে বলেছে ফিল্ডিং নেব। নামার পরে দেখি ব্যাটিং। বিশ্বকাপে দেখেছি…এই খেলার আগে দেখেছি যে অন্তত দুজন পেসার খেলবে। খেলেনি তো! আমার কথা হচ্ছে, কেন হচ্ছে, এটাই বের করতে চাচ্ছি।”
নাজমুল হোসেনের দাবি, কৌশলের ভুল তারা আগে থেকেই জানতেন। এবার আরও পোক্ত হয়েছে ধারণা।
“পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে কিছু ইস্যু আছে। এটা আগে থেকেই মনে করতাম যে প্রতিটি ভুল। কিন্তু প্রথমবার যখন আফগানিস্তানের সঙ্গে হয়েছে, সবাই ধরে নিয়েছিল এটা একটা দুর্ঘটনা। হঠাৎ হয়ে গেছে। কিন্তু এবার দুটো ম্যাচ খেলার পরে সবাই বুঝতে পারছে, কোথাও সমস্যা আছে।”
সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলার যে পালা চলছে, এটিকেই সামনে এগোনোর উপযুক্ত পথ মনে করেন নাজমুল। তার বিশ্বাস, সামনেই সমস্যার সামাধান হয়ে যাবে।
“একটা জিনিস আমি আপনাদের বলতে পারি, সমস্যা কোথায় এটা যে কেউ বুঝি না বা জানি না, তা নয়। কিন্তু যে পদ্ধতি দিয়ে যাচ্ছি এখন, এটাই আমার মনে হয় সঠিক পদ্ধতি। ‘এটা করবা না, ওটা করবা না’ বলার চেয়ে, এইভাবে ওদেরকে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এনে যেটা করা হচ্ছে, এটা হচ্ছে আরও ভালো। আগে সোজা বলে দিতাম, ‘এটা করো, ওটা করো।’ এখন এটা করি না।”
“এই সমস্যার সমাধান কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। কিন্তু সবাই যাতে সমস্যাটায় একমত হয়, তাহলেই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। এই প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে। এটা কেবল সময়ের ব্যাপার। কয়েক মাসের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”