প্রক্রিয়াজাত খাদ্য
ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যতে দেশীয় বাজার ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য একই মানের খাবার প্রস্তুত
করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য
দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে দেশের প্রথম সারির
খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়
সভায় মন্ত্রী একথা বলেন।
সরকারি-বেসকারি পর্যায়ে
বছরে অন্তত তিনবার এ ধরনের আলোচনা আয়োজনের পরামর্শ দেন তিনি।
সিইওদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী
বলেন, “ভোক্তারা দেশে তৈরি খাদ্যপণ্যে কম আস্থা রাখছে। আবার বিদেশে রপ্তানির জন্য কোনো
পণ্য প্যাকেটজাত করলে তাতে আস্থা বেশি থাকছে। এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। যেই
মানের পণ্য রপ্তানির জন্য তৈরি করা হয় সেই মানের পণ্যই যেন দেশের বাজারের জন্য তৈরি
করা হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা কাউকে
অযথা হয়রানি করতে চাই না। তবে আপনারা নিজেদের অন্তরটা ঠিক রাখবেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে
মানবপ্রেম, দেশপ্রেম থাকলে খাদ্য ব্যবসা এগিয়ে যাবে।”
বিভিন্ন সময় খাদ্যে
ভেজাল অনুসন্ধানের নামে ‘ষড়যন্ত্রমূলক বা উদ্দেশ্যমূলক’ কর্মকাণ্ড করা হয়েছিল বলে উল্লেখ
করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “নিরাপদ
খাদ্য কর্তৃপক্ষ যখন গঠন হল তখন উত্তরবঙ্গ থেকে আসা অনেক আম গাবতলী পর্যন্ত পৌঁছানোর
পরই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল ফরমালিনের কথা বলে। আসলে ফরমালিন কোনো সমস্যা নয়। বিষয়টি
হচ্ছে এর মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ নিয়ে।
“এখন আম ব্যবস্থাপনা
একটা নিয়মের মধ্যে চলে এসেছে। আমরা কোন আম কখন বাজারজাত করতে হবে, তার জন্য একটা তারিখ
ঘোষণা করে দিয়েছি। সেই অনুযায়ী এখন আম বাজারজাত হচ্ছে।”
দুই বছর আগে বাংলাদেশে
দুধের মধ্যে ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে খাদ্যমন্ত্রী
বলেন, “সেটাও ছিল একটা ষড়যন্ত্র। এর পেছনে কারা ছিল পরে আমরা সেটাও বের করেছি। আসলে
দেশীয় বাজার নষ্ট করে আমদানি পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য এ ধরনের প্রপাগান্ডা ছড়ানো
হয়েছিল।”
ইউনিলিভারের সিইও কেএসএম
মিনহাজ বলেন, “ভোক্তারা দেশীয় পণ্যের তুলনায় আমদানি পণ্যের দিকে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
এটা নকল পণ্য তৈরি হওয়ার একটা বড় কারণ। ইউনিলিভার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও দেশীয় মানদণ্ড
নিশ্চিত করেই সব ধরনের পণ্য তৈরি করে থাকে।”
নিরাপদ খাদ্য আইনের
একটি ধারা নিয়ে তিনি বলেন, এই আইনে খাদ্য পরিদর্শকদের উৎপাদনকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি
(ক্রিমিনাল কেইস) মামলা করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে, যা জামিন অযোগ্য।
“এই আইনের অপপ্রয়োগ
করে যে কেউ ব্যবসায়ীদের হয়রানি করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ক্ষেত্রে সিভিল
মামলা করার নিয়ম আছে।”
এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি
ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক বলেন, দেশে সরকারি-বেসরকারি
মিলিয়ে ৫০০টির মতো ‘ফুড ল্যাবরেটরি’ রয়েছে। কিন্তু এর অধিকাংশেরই ‘অ্যাক্রেডিটেশন’
নেই। ফলে এগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এগুলোর স্বীকৃতির জন্য একটি কর্তৃপক্ষ
গঠন করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত
একাধিক ব্যবসায়ী দাবি করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা মাঝে মধ্যেই নকল পণ্যের উৎপাদন
ও বিপণন দেখতে পান। এসব অপরাধ একদিকে ব্যবসার ক্ষতি করে অন্যদিকে স্বাস্থ্যের জন্যও
ক্ষতিকর। কর্তৃপক্ষকে এই দিকে নজর দিতে হবে।
এ বিষয়ে খাদ্য সচিব
মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, এ ধরনের অনিয়ম চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ৩৩৩ কলসেন্টারে
খবর দিতে হবে। সরকারের জেলা- উপজেলা পর্যায়েও ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান
চালছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের
চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, বসুন্ধরা
গ্রুপের প্রতিনিধি মোস্তফা কামাল ভূঁইয়া, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সিইও পারভেজ
সাইফুল ইসলামসহ আরও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।