ক্যাটাগরি

ধর্ষণের মামলায় গাফিলতি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন-এসপির ভুল স্বীকার

আদালতের নির্দেশে তারা বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ মো.
জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের বেঞ্চে হাজির হয়ে ক্ষমা চান।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম; চিকিৎসদের পক্ষে আইনজীবী বাকির উদ্দিন ভূইয়া এবং আসামির পক্ষে হাই কোর্ট থেকে নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের আইনজীবী কুমার দেবুল দে এ সময় আদালতে ছিলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল পরে সাংবাদিকদের বলেন, আদালত তাদেরকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ১১ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে।

৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর তার বাবা এক ছেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় মামলা করেন।

মামলায় তার বয়স ১৫ বছর উল্লেখ করা হলেও ডাক্তারি পরীক্ষায় ১১ বছর বয়স নির্ধারিত হয়।

এর আগে ধর্ষণের শিকার শিশুটির ডাক্তারি
পরীক্ষা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে বিপরীতমুখী
প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

ওই মামলার আসামি শিশুটিরর জামিন আবেদনের
উপর শুনানিতে দাখিল করা নথিতে ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদনে এসব অসামঞ্জস্যতা
এবং মামলার তদন্তে গাফিলতির কথা থাকায় সিভিল সার্জনসহ নয় চিকিৎসক এবং পুলিশ সুপারসহ
তিন কর্মকর্তাকে তলব করে আদালত।

আদালতের তলবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা.
মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ, পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান ছাড়াও সংশ্লিষ্ট নয় চিকিৎসক এবং নাসিরনগর থানার ওসি এটিএম আরিফুল হক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো, আরিফুর রহমান সরকার হাজির হন।

সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বিচারক শেখ মো. জাকির হোসেন বলেন,
“আমাদের জীবন আপনাদের আজ্ঞাবহ পিয়নের ওপর ছেড়ে দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাক্টিসে নেমে পড়েন- এটা তো প্রত্যাশিত না।”

তদন্তের গাফিলতির চিত্র তুলে ধরে তদন্ত
কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে করে বিচারক বলেন,
“হাসপাতালে মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছে- এটা প্রতিষ্ঠিত করতে তদন্ত শুরু করেছিলেন। আবার হাসপাতালের সার্টিফিকেট চাইলেন। প্রতিবেদনে লিখে দিলেন গণধর্ষণ।

“মেয়েটি বয়স সাত বছর এবং ছেলেটির বয়স ১১ বছর যদি ধরে নেওয়া হয় তাহলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় মামলা কীভাবে হয়? কেন এটিকে ধর্ষণ বানানো হল?”

তদন্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলেন, ভুল হয়েছে।

এরপর এসপি আনিছুর রহমানে উদ্দেশ্যে জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “আপনার তদন্ত কর্মকর্তা ছেলেটিকে ধর্ষক বানাতে চার্জশিট দিয়েছে। ৯(১) ধারায় চার্জশিট হল, এই ধারায় তো মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে, তখন কী হতো!”

এসময় এসপি বলেন,
“আমাদের কাজ করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত অনেক ভুল হয়ে থাকে। এই ধরণের ভুল হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

পরে আদালত সিভিল সার্জনের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি হাসপাতালের ভুল রিপোর্টের জন্য আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।

এরপর সবাইকে ব্যক্তিগত হাজির থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রয়োজনে পরবর্তিতে এই বিষয়ে ব্যাখ্যার জন্য ডাকা হলে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে বলেছে আদালত।

পাশাপাশি এই বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সচিবের করা দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামী ১১ মার্চ দিন রাখেন বিচারক।