ক্যাটাগরি

‘আমরা থামবো না’, সামরিক জান্তাকে বার্তা মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের

দেশটির পুলিশ রোববার অভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারীদের সমর্থন করায় হুলিয়া জারি হওয়া এক সুপরিচিত অভিনেতাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে তার স্ত্রী ফেইসবুকে জানিয়েছেন।

সহিংসতায় প্ররোচনা বন্ধে নিজেদের বিধিবিধানের আলোকে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মূল পেইজটি ডিলিটও করে দিয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, অভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চিসহ অন্য রাজনীতিকদের আটকের বিরুদ্ধে গত দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে যে বিক্ষোভ ও আইন অমান্য কর্মসূচি চলছে সামরিক জান্তা তা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

রোববার ইয়াংগনের দুটি স্থানে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে;  শনিবার যে শহরে গুলি চলেছিল, সেই মান্দালয়ে লাখো মানুষ শান্তিপূর্ণ সমাবেশও করেছে, জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত দেখা উত্তরের শহর মেকিনাতে অসংখ্য মানুষ ফুল দিয়ে নিহত বিক্ষোভকারীদের স্মরণ করেছেন। 

মধ্যাঞ্চলীয় শহর মোনিওয়া ও বাগাম দক্ষিণের দাউই, মেইক এবং পূর্বাঞ্চলীয় মায়াওয়াদি শহরেও বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছে।

“তারা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের মাথাকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। তারা আমাদের ভবিষ্যৎকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে,” মান্দালয়ে সমাবেশে এমনটাই বলেছেন তরুণ এক বিক্ষোভকারী।

শনিবারের বিক্ষোভে গুলি এবং এর প্রতিবাদে মিয়ানমারজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি সম্পর্কে রয়টার্স টেলিফোনে সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্র জ মিন তুনের মন্তব্য জানার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সামরিক বাহিনীর এ মুখপাত্র সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে সংবিধানসম্মত এবং এ অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের বেশিরভাগ লোকের সমর্থন আছে বলে দাবি করেছিলেন।

বিক্ষোভকারীরাই সহিংসতায় প্ররোচনা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

মিয়ানমার ২০১১ সালের আগেও প্রায় অর্ধশতক সেনাশাসনে ছিল; সেসময় অসংখ্য রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ দেখা গেছে। সে তুলনায় এবারের প্রতিবাদগুলো বেশ শান্তিপূর্ণই হচ্ছে।

“মানুষ আরও বাড়বে, আমরা থামবো না,” বলেছেন ইয়াংগনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ইন নিয়েন।

জাতিসংঘনের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টার টম অ্যান্ড্রুজ শনিবার মান্দালয়ে গুলিতে এক কিশোরসহ ২ জন নিহতের ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছেন।

“জলকামান থেকে রাবার বুলেট, কাদুঁনে গ্যাস আর এখন সৈন্যরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। এই পাগলামি বন্ধ করতে হবে, এখনই,” টুইটারে বলেছেন তিনি।

মিয়ানমারের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট বলছে, শনিবার বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন নৌযানে নাশকতা চালানোর পাশাপাশি পুলিশের ওপর লাঠি, ছুরি ও গুলতি নিয়ে হামলা চালায়। এতে পুলিশের ৮ সদস্য  ও বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য আহত হয়েছে।

গ্লোবাল নিউ লাইটের প্রতিবেদনে গুলিতে নিহতের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি; নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা ব্যবস্থায় ‘কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে’ বলে জানিয়েছে তারা। 

সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) মান্দালয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে।

৯ ফেব্রুয়ারি নেপিডোতে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে মাথায় গুলিবিদ্ধ এক তরুণী শুক্রবার একটি হাসপাতালে মারা যান। রোববার তার শেষকৃত্যে কয়েক হাজার মানুষ যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

সেনাবাহিনীর সংবাদমাধ্যম বলছে, মেয়া থুই থুই খাইংয়ের দেহে যে গুলি মিলেছে তা সেদিনের বিক্ষোভে পুলিশের ব্যবহার করা কোনো বন্দুকের নয়। ‘বাইরের কোনো অস্ত্র’ থেকে ছোড়া গুলিতে ২০ বছর বয়সী ওই তরুণীর মৃত্যু হতে পারে বলেও অনুমান তাদের।

অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে আহত এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী।