ক্যাটাগরি

জাবি হলে শিক্ষার্থী বাড়ছে, কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তহীনতায়

দুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের পরে নিরাপত্তার দাবিতে শনিবার দিনভর বিক্ষোভ দেখিয়ে তালা ভেঙে হলে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। রোববার তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরও অনেকে।

দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেছেন তারা, যার মধ্যে ক্যাম্পাস ও হল পুরোপুরি খুলে দেওয়ার দাবিও রয়েছে।

এদিকে সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হল খোলার কোনো ঘোষণা না আসায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শনিবারও এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেছে। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।

“আমাদের এখন নিজস্ব কোনো বক্তব্য নেই। শিক্ষার্থীরা হলে থাকবে কী থাকবে না সে ব্যাপারে আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। হয়তো শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানা যাবে। সে আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও গতবছর ১৭ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে দর্শনার্থী প্রবেশ এবং সব ধরনের অনুষ্ঠান ও জমায়েত নিষিদ্ধ’ করে কর্তৃপক্ষ।

হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ বাড়ি ফিরে গেলেও তাদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গেরুয়া, আমবাগান, ইসলামনগরসহ বিভিন্ন গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে এবং মেসে থাকতে শুরু করেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় গেরুয়া এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

এর প্রতিবাদে কয়েকশ শিক্ষার্থী শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন এবং নিরাপত্তা চেয়ে এবং হল খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা নিজেরাই একে একে ১৬টি হলের সবগুলোর তালা ভেঙে ভেতরে ঢুতে পড়েন।

রোববার দুপুরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।

তাদের দাবিগুলো হল- হামলার সাথে জড়িতদের নামে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা এখনও গেরুয়া এলাকায় অবস্থান করছেন, তাদের পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনা, হল খুলে দিয়ে সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, হামলার সময় যারা আহত হয়েছেন, তাদের পাশাপাশি যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাস ও আশেপাশের সকল শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়া এবং ক্যাম্পাসে ‘অস্থিতিশীলতা তৈরির দায়ভার’ বহন করা।

এর মধ্যে একটি দাবি ইতোমধ্যে পূরণ করেছে প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী।

দিনের বেলায় বিভিন্ন হলে ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে যে হিসাব পাওয়া গেছে, তাতে ইতোমধ্যে চারশর বেশি ছাত্র ছেলেদের আটটি হলে উঠে পড়েছেন। রোববারও অনেকে উঠেছেন। ক্যাম্পাসের রাস্তায় রিকশা ও অটোরিকশা চলাচলও শুরু হয়েছে।

তবে হলগুলোতে ক্যান্টিন বা ডাইনিং চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বাইরের খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্র্রনাথ ঠাকুর হলে অবস্থানরত পাবলিক হেলথ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমরা অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী গতকাল রাতে হলে ছিলাম। আজকেও অনেকে আসছে। ডাইনিং-ক্যান্টিন একটাও চালু করা হয়নি। তবে সিনিয়র ভাইয়েরা চেষ্টা করছেন কীভাবে খাবার ম্যানেজ করা যায়। আপাতত সবাই বাইরে খাচ্ছি। যারা এখনও বাড়িতে আছে, আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করছি যেন হলে চলে আসে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নিরাপত্তা কর্মী মো. ইউনুস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পঞ্চাশজনের মত শিক্ষার্থী গতকাল রাতে হলে ছিল। আজকেও প্রায় বিশজন আসছে। এখন পর্যন্ত হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন খোলা হয়নি। তবে হলের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তারা পাচ্ছেন।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের (৪৫তম ব্যাচ) তাবিয়া ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিরাপত্তাজনিত কারণে ছাত্রী হলগুলোতে এখনও কেউ থাকছে না। আমরা আশা করছি, প্রশাসন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব হল খুলে দেবে।”

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসনের মধ্য দিয়ে চলে ঠিকই, তবে এই মহামারীতে একটা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রের বিপরীতে যেতে পারে না।”

আর হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রী মহোদয় পরে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেছেন।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গতকাল থেকে হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি হিসেবেও আমি এখন পর্যন্ত নতুন কোনো নির্দেশনা পাইনি।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন, প্রশাসনের ‘সিদ্ধান্তহীনতার’ কারণেই এরকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

“অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলছে আংশিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে, পরীক্ষা নেবে। এরকম আরও কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এসব কিছু দেখে না।

“তাদের নির্লিপ্ততা, সিদ্ধান্তহীনতা আর দীর্ঘসূত্রতার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রশাসন চাইলেই একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারত।”

তিনি বলেন, কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশেই থাকে। মহামারীর মধ্যে এভাবে বাইরে থাকাও ঝুঁকিপূর্ণ। এর চেয়ে হলে অবস্থান করতে পারলে তাদের জন্যও ভালো হত।

“এটা আগে থেকেই প্রশাসনের বিবেচনায় আনা উচিৎ ছিল। এ কারণেই মূলত এই অবস্থা হয়েছে। তারা এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।”