এসব শীতের সবজি ‘শীত চলে যাওয়ায় এবং একসঙ্গে
অনেক সবজি বাজারে আসায়’ দাম কমে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের
উপ-পরিচালক মহিত কুমার দে।
জেলা শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়াম
কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেক চাষি লোকসানের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। উৎপাদন খরচ
না ওঠায় পরবর্তী চাষাবাদের টাকা কোথায় পাবেন তাই নিয়ে তারা দুশ্চিন্তা করছেন।
স্টেডিয়াম কাঁচাবাজারে শনিবার সবজি নিয়ে আসেন
সদর উপজেলার কান্দা শেরীরচর গ্রামের চাষি আল আমিন তোতা।
বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এইবার আট কাডা জমিতে পাতাকপি আবাদ করে ৪০-৪২ হাজার টেহা
খরচ হইছে। বেচছি মাত্র ২৫ হাজার টেহা। আর ফুলকপি করছি ২৬ কাডা জমিতে। এক লাখ ২০ হাজার
টেহা খরচ। বেচছি মাত্র ১৫ হাজার টেহা।
“আইজকার বাজারে ৫০০ ফুলকপি নিয়া আইছি। বাজারের
জমা গেছে ১০০ টেহা। গাড়ি ভাড়া ৩০০ টেহা। বেচা অইছে ৬০০ টেহা। অহন আমার খরচ-মরচ বাদ
দিয়া ২০০ টেহা টিকব।”
উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের চাষি আকরাম মিয়া
১৮ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ছয় কাঠা জমিতে বাঁধা কপির আবাদ করেছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, “এহন অবধি বেচছি ১৮০০ টেহা। বাকি
কপি ক্ষেতেই পড়ইরা রইছে। আইজ বাজারে আড়াইশ বান্ধা কপি নিয়া আইছি। কিছু তিন টেহা (তিন
টাকা প্রতিটা) কইরা বেচছি। বাকিডি নেয় না।”
আরও বেদিশার কথা বললেন লছমনপুর নয়াপাড়া গ্রামের
কফিল উদ্দিন।

তিনি বলেন, “৪০ হাজার টেহা কপিক্ষেতে খরচ করছি।
এক টেহাও উডে নাই। এহন তিনশ ফুলকপি নিয়া আসছি বাজারে। বেচতাছি ২ টেহা কইরা। গাড়ি ভাড়া
আর বাজার খরচ উঠতাছে আরকি। মনের অবস্থা খুউব খারাপ। আরেকটা ফসল যে অহন করমু ওই টেহাই
ত এহন হাতে নাই।”
কৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি মানিক মিয়া বলেন, “৩০
হাজার টেহা করচ কইরা ৪০ শতাংশ জমিতে বাঁধা কপি আবাদ করছি। তিন টেহা কইরা এইবার সাত
হাজার টেহার কপি বেচছি। আরডি (বাকিটা) গরুরে খাওয়াই হারছি (দিচ্ছি)। লস এইবার। কপির
মধ্যে এইবার লাভ হয় নাই।”
হাতি আগলা গ্রামের চাষি সামাদ বলেন, “তিনশ ফুলকপি
বাজারে নিয়াই ছিলাম। প্রতিটি দুই টেহা কইরা বেচছি। তাও নিবার চায় না। যে খরচ কইরা বাজারে
কপি আনছি সেই খরচও উডে না। সব নছ (লস)। পাঁচ কাডা জমিত ফুলকপি চাষ কইরা খরচ অইছে ২০
হাজার টেহা। দুই হাজার টেহার কপি বেচা অইছে।
বাকি কপি গরুরে খাওয়াইতাছি। গরুও খাবার চায় না।”
একই গ্রামের চাষি আরশাদ আলী বলেন, “অহন কপি আবাদ
কইরা মইরা গেছি গা। বাজারে আনছি। নিবার চায় না। ৩০ হাজার টেহা খরচ কইরা ছয় কাডা জমিত
ফুলকপি আবাদ করছি। বেচলাম মাত্র তিন হাজার। দাম করতাছে দেড়-দুই টেহা কইরা। অবেই (এভাবেই)
বেচতাছি। খরচ-মরচ উডে না।”
দাম না থাকার কারণ এবং পরবর্তীতে করণীয় জানিয়েছেন
কৃষি কর্মকর্তা মহিত কুমার।
তিনি বলেন, “এবার আবাদ বেশি হয়েছে। তাছাড়া অনেক
সবজি একসঙ্গে বাজারে উঠেছে। আবার শীতের এসব সবজি শীত চলে যাওয়ায় চাহিদা কমে গেছে।
“কৃষকদের একই ফসল প্রতিবছর চাষ না করার পরামর্শ
দেওয়া হয়ে থাকে। এই পরামর্শ মেনে চললে বাজারে ভারসাম্য বজায় থাকে। দাম নিয়ে এভাবে বিপাকে
পড়তে হয় না। যারা এসব পরামর্শ মানেন না তারাই ক্ষতির মুখে পড়েন।”