দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা যতটুকু জানি, তিনি (খালেদা জিয়া) দারুণভাবে অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন, যে চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। এমন কি যে হাসপাতালে
(বিএসএমএমইউ) তিনি ছিলেন, সেখানেও সম্ভব হয়
নাই। প্রয়োজনে সুচিকিৎসার জন্য তার বাইরে যাওয়া হয়ত দরকার
হবে।
“এই ব্যাপারে সরকারেরে একটা নিষেধাজ্ঞা আছে আপনারা জানেন। আমরা দাবি জানাব যে নিষেধাজ্ঞাটা প্রত্যাহার করা হোক এবং
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক, যেন তিনি
তার চিকিৎসার প্রয়োজনে যখন যেখানে যেতে চান, তিনি যেতে পারেন।”
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গতবছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে ছয়
মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তার পরিবারের আবেদনে পরে তা আরও ছয় মাসের
জন্য বাড়ানো হয়, যার মেয়াদ আগামী ২৪ মার্চ শেষ হওয়ার কথা
রয়েছে।
সরকার শর্ত দিয়েছে,
এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
মুক্তি
পাওয়ার পর থেকেই গুলশানে
নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৫ বছর বয়সী খালেদা। বহু বছর ধরেই তিনি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখের
সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন।
বিএনপি
বলছে, সরকার সাময়িক মুক্তির কথা বললেও তাদের চেয়ারপারসন কার্যত ‘গৃহবন্দি’।
সে কারণে ওই শর্ত প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন দলটির নেতারা।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এদেশের ইতিহাসে অসুস্থতার
কারণে রাজনৈতিক নেতাদের বাইরে যাওয়ার বহু দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু তাদের নেত্রীকে
‘নিষেধাজ্ঞা’ দিয়ে রাখা হয়েছে।
“আমরা মনে করি, এই অযৌক্তিক ও অমানবিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা
দরকার। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী… তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা
করে যে কখন কোথায় চিকিৎসার জন্য
যেতে চান। এবং যেটা প্রয়োজন হবে সেটা যাতে বিঘ্নিত না হয়,
সরকারের উচিত সেটা নিশ্চিত করা।”
এ বিষয়ে
বিএনপি কী করবে জানতে চাইলে নজরুল বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে
সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। এটা রাজনৈতিক বিষয় না, এটা তার চিকিৎসার বিষয়।”

সাময়িক
মুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় বিএনপি এখন কী প্রত্যাশা করছে জানতে চাইলের দলটির স্থায়ী
কমিটির এই নেতা বলেন, “এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার, আর আমরা তো বরাবর, বলেছি- আমরা তার
নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, তাকে সাজাই দেওয়া হয়েছে অন্যায়ভাবে,
বিনা
অপরাধে।”
“খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি দন্ডপ্রাপ্ত, তাদেরকেও
মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কেন দেওয়া হয়েছে
সেটা আপনারাও জানেন। কারণ এটা খালেদা জিয়ার জন্য প্রযোজ্য না। তিনি সরকারের আপনজন
না, প্রতিপক্ষ। সরকার তার প্রতি
যে আচরণ করছে, যেটা প্রতিপক্ষেরও না, শত্রুর আচরণ।”
খালেদা জিয়া বর্তমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “এ ব্যাপারে তার যারা চিকিৎসক টিম এবং তার আত্মীয়স্বজনদের বক্তব্য আপনারা বিভিন্ন সময়ে জানছেন এবং প্রকাশও করছেন। এর বাইরে
তো বলার কিছু নাই।
“কারণ আমরা তো তার সাথে দেখাই
করতে পারি না। আমরা আপনাদের মত যতটুকু জানি তিনি দারুণভাবে অসুস্থ।
তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন।”
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো জানাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন নজরুল।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন বিএনপি মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দেশ থেকে খন্দকার মোশারররফ
হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস,
গয়েশ্বর
চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান,
আমীর
খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।
নজরুল বলেন, সম্প্রতি নড়াইলের
আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, বরিশালে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সমাবেশে যোগদানে বিএনপি
নেতা-কর্মীদের ‘বাধা’ দেওয়া এবং সিলটের
সিটি মেয়র আরিকুর হক চৌধুরীসহ তার সহকর্মীদের ওপর ‘হামলার’ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে
সেই সঙ্গে বগুড়ায় ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি
দলীয় সাংসদ ও জেলার আহবায়ক জিএম সিরাজসহ নেতা-কর্মীদের ওপর ‘হামলা’ এবং নোয়াখালীর বসিরহাটে ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে
গুরুতর আহত সাংবাদিক মোজাক্কির বোরহান উদ্দিনের মৃত্যুর
ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “অ্যাটর্নি
জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনকে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটিতে সদস্যা করায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ
করে বলা হয়েছে যে, একটি সাংবিধানিক পদের অধিকারীকে দলীয় পদে নিযুক্ত করা দেশের ইতিহাসে
একটি নতুন ঘটনা এবং নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কার্যালয়কে নগ্ন
দলীয়করণের অপচেষ্টা ও একটি অত্যন্ত মন্দ দৃষ্টান্ত।
“বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন
কর্মকর্তার পদের নিরপেক্ষতা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের উচিত, হয় দলীয় পদ কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করা। যারা তাকে নিয়োগ দিয়েছেন, তাদেরও উচিত অনৈতিক এই বিষয়টির গুরুত্ব ও জনমনে এর অনিবার্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে দলের উপ-কমিটি থেকে অবিলম্বে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বাদ দেওয়া।”