ক্যাটাগরি

পানি ছিটিয়ে শাহবাগ অবরোধকারীদের সরালো পুলিশ

বাংলাদেশ
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা
মঙ্গলবার বেলা
১১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে
চারপাশের রাস্তায়
তীব্র যানজট দেখা দেয়।

জনদুর্ভোগের
কারণে কয়েক দফা অনুরোধের পরও
তারা রাস্তা না ছাড়লে সন্ধ্যা ৬টার
দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ জলকামান নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। অবরোধকারীরা
তখন ছত্রভঙ্গ হয়ে
শাহবাগ মোড় ত্যাগ করেন।

এ সময় বেশ
কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নেতারা।

সংগঠনের
মহাসচিব শফিকুল ইসলাম বাবু টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। কয়েকজনকে তুলে নিতে যেতে দেখা গেছে। আমরা অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।”

এ পরিস্থিতিতে
আপাতত কর্মসূচি
স্থগিত করার কথা জানিয়ে তিনি
বলেন, “শিগগিরই সংবাদ
সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি জানাব।”

শাহবাগ
থানার ওসি মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে তাদেরকে আমরা যথেষ্ঠ সম্মান দেখিয়েছি। জনদুর্ভোগ ও হাসপাতালে আসা
রোগীদের কথা বিবেচনা করে আমরা তাদের শাহবাগ মোড় ছেড়ে অন্যত্র যেতে বলেছি। কিন্তু তারা আমাদের অনুরোধ রাখেননি। পরে পুলিশ বাধ্য হয়ে সেখান থেকে তাদের উঠিয়ে দিয়েছে।”

সংগঠনটির
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওসি বলেন, “কাউকে আটক করা
হয়নি। তবে রাস্তা ছাড়তে তাদের উপর জলকামান ব্যবহার করা হয়েছে।”

এর আগে দুপুরে
শাহবাগ মোড় অবরোধ করার পর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান
সংসদের সহ-সভাপতি মিজানুর
রহমান বলেছিলেন, সরকারের তরফ
থেকে দাবি পূরণের ঘোষণা
না আসা পর্যন্ত তারা অবস্থান চালিয়ে যাবেন।

“চাকরিতে
৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালসহ আমাদের সাত দফা দাবি না মানা পর্যন্ত
আমরা শাহবাগ ছেড়ে যাব না। সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মীরা এসেছে। নেতাকর্মীদের অন্তত তিন দিনের খাবার ব্যবস্থাসহ উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। লাগাতার কর্মসূচি চলবে।”

এ সংগঠনের
দাবিগুলো হল-

# সকল
চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা
কোটা পুনর্বহাল করা

# সাংবিধানিক
স্বীকৃতি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের
সুরক্ষা আইন পাস করে মর্যাদা নির্ধারণ করা

# মুক্তিযোদ্ধা
সংসদ নির্বাচনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের একজন প্রতিনিধিকে ভোটার করা এবং ১৯৭২ সালের সংজ্ঞা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন

# মুজিব
কোটের পবিত্রতা রক্ষায় সিনেমা, সিরিয়াল নাটকে মন্দ চরিত্রের মুজিব কোট পরা নিষিদ্ধ করাসহ মন্দ লোকদের মুজিব কোট পরার সুযোগ বন্ধ করার জন্য আইন
পাস করা

# মুক্তিযোদ্ধা
কল্যাণ ট্রাস্টের পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলমুক্ত করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা

# মুক্তিযোদ্ধা
পরিবারের ওপর হামলা নির্যাতন ও জমি দখলের
বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া

# দুর্নীতি,
মাদক, ধর্ষণের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখাসহ কঠোর আইন প্রণয়ন করা এবং হাসপাতাল, সরকারি অফিস, বিমান বন্দরসহ সব জায়গায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া

২০১৮
সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল।
এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র
নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।

ওই
পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা
ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেয়
সরকার।

কমিটি
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের
সুপারিশ করলে ওই বছরের ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভা তাতে সম্মতি দেয়। পরে প্রথম ও দ্বিতীয়
শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।