বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৫৫তম ব্যাচের ক্যাডেটদের ‘মুজিববর্ষ গ্রাজুয়েশন প্যারেড’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একাডেমির চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে এই আয়োজনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের নদীগুলোকে আমরা নাব্যতা ফিরিয়ে এনে এই নদীমাতৃক বাংলাদেশের নৌপথকে আরও উন্নত, আরও সচল করে দিচ্ছি। যেন অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য পরিবহন খুব সুষ্ঠুভাবে, সুন্দরভাবে করতে পারি। সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি।”
বর্তমান সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, “বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তার উপর আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন করলেও ১৯৭৫ সালের পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা কিন্তু এই ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ বা খালেদা জিয়া তাদের কোনো উদ্যোগই ছিল না। তারা দেশটাকে চিনত না,জানতও না।
“আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া আমাদের বে অব বেঙ্গল, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা চ্যানেল, গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা। বিশ্বের অনেক ব্যবসা বাণিজ্য এখান থেকে চলে।”
প্রতিযোগিতাময় বিশ্বের সঙ্গে চলতে হলে সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
“আমি আশা করব, যারা আজকে ট্রেনিং পেয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবেন তারা সবাই যখনই যে দেশে কাজ করবেন, নিজেদের দেশ হোক আর বিদেশে হোক, সেই দেশের আইন, নিয়মকানুন বা সমুদ্র আইন সবকিছু মেনে চলতে হবে। শৃঙ্খলাবোধ ভেতরে থাকতে হবে এবং কর্মক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে, যেন দেশে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন থাকে।”
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কথা ক্যাডেটদের মনে রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ক্যাডেটরা নতুন জীবনে পদাপর্ন করছে। সেখানে দেশে বিদেশে দেশের মান রক্ষা করে চলতে হবে। আর সেই সাথে যখন যে দেশে যাবে, আমাদের সভ্যতা, আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতি সেটাও আদান-প্রদান করতে হবে এবং অন্য জায়গা থেকে ভালো কিছু শিক্ষা নিয়ে আসতে হবে। নিজ দায়িত্ব সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। যাতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হয়। সেই বিষয়টার দিকে সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে।”
করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্ব স্থবির হয়ে গেলেও সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে মানুষের জীবনকে সুরক্ষিত করতে অনেক উন্নত দেশের অনেক আগেই বাংলাদেশ টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “যদিও আমরা টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি সেক্ষেত্রেও আপনারা সকলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম নীতি মেনে চলবেন। মাস্ক ব্যবহার করা, হাত পরিষ্কার রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এটা একান্তভাবে প্রয়োজন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন এবং আপনার সুরক্ষা অন্যকেও সুরক্ষিত করবে।
“কাজেই টিকা দেওয়ার পর এটা কেউ মনে করবেন না যে, আপনাদের সব সমস্যা সব সমাধান হয়ে গেছে। এটা মনে রাখতে হবে যে তারপরও নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সব সময় মাস্ক পরতে হবে এবং সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। আমি আশা করি প্রত্যেকেই সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।”
৫৫তম ব্যাচের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ক্যাডেটদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন পদক তুলে দেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি প্রান্তে এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়টির সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।