শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল করার সময় জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জোটের নেতাকর্মীরা বলছেন, পুলিশ তাদের ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে; ‘রাস্তার আলো বন্ধ করে’ তাদের লাঠিপেটা করেছে এবং কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছে।
তবে পুলিশ বলছে, মশাল মিছিল থেকে তাদের উপর আক্রমণ হওয়ার পর তারা ‘আত্মরক্ষামূলক’ পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মশাল মিছিলটি শাহবাগে গিয়ে পুলিশের বাধা পায়। সেখানে বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশ রাস্তার ল্যাম্পলাইট বন্ধ করে বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা শুরু করে।
পরে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর মিছিলকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সরে এলে সেখানেও কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়।
পুলিশের সাথে সংঘর্ষে বাম ছাত্র সংগঠনগলোর ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের দুজনকে আটক করে থানায় নিয়েছে পুলিশ। তাদেরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে। রাস্তার লাইট অফ করে আমাদের উপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে। বাধা পেয়ে ফিরে আসার সময় পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকেও পিটিয়েছে।
“এতে আমিসহ আমাদের ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। এই হামলার প্রতিবাদে আমরা আগামীকাল বিক্ষোভ করব।”
আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
কারাবন্দি অবস্থায় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মশাল মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা।
পর পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “সকাল থেকেই শাহবাগে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ করেছে। আন্দোলন সংগ্রাম করবে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু পুলিশের উপর হামলা! পুলিশ অনেক ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করেছে।
“সন্ধ্যার দিকে একদল টিএসসি থেকে মশাল মিছিল নিয়ে জাদুঘরের সামনে আসলে আমরা তাদেরকে ইউ টার্ন নিতে বলি। পরে তারা মশালের লাঠি দিয়ে পুলিশের উপর হামলা করে। তখন পুলিশ আত্মরক্ষার্থে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এদের একটা গ্রুপ বামপাশ দিয়ে চলে যায়, আরেকটা গ্রুপ পিছনে ফিরে পুলিশের উপর অসংখ্য ইটপাটকেল ছুড়ে। এতে আমাদের ১২-১৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। আমার নিজেরও পায়ে আঘাত লেগে ব্লিডিং হয়েছে।”
আহত বিক্ষোভকারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা জানি না তারা কীভাবে আহত হয়েছে। কিন্তু তারা যেভাবে ইটপাটকেল মেরেছে, তাদের ইটপাটকেলেই তারা আহত হয়ে থাকতে পারে। পুলিশ শুধু তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। তারা যখন ইটপাটকেল মারছে, তখন পুলিশ ৪-৫টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।”
ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের হেফাজতে দুইজন আছে। আমরা এদের যাচাই-বাছাই করে দেখব। হামলায় জড়িত না থাকলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।”
এর আগে দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আটক অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো।
সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পরীবাগ ঘুরে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন সংগঠনগুলোর শতাধিক নেতাকর্মী। এক ঘণ্টার বেশি সময় বিক্ষোভকারীদের অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড়ের চারপাশের রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়।
শাহবাগের অবস্থান থেকে সন্ধ্যায় টিএসসিতে মশাল মিছিল এবং ১ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় টিএসসি অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।