প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের
প্রশাসনের প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া খাশুগজিকে
আটক বা হত্যার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিলেন প্রিন্স।
দুই বছর আগে দুনিয়াজুড়ে
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সংশ্লিষ্টতার কথা এবারই প্রথম প্রকাশ
করল যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৮ সালে ইস্তাবুলে
সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে নিহত হন জামাল খাশুগজি। সৌদি শাসক গোষ্ঠীর সমালোচক হিসেবে পরিচিত
ছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের দপ্তরের এই প্রতিবেদনে
বলা হয়, “সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান সাংবাদিক জামাল খাশুগজিকে
হত্যা বা আটক করতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে আমাদের কাছে
প্রতীয়মান হয়েছে।”
বিবিসির এক প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে, সৌদি ক্রাউনের প্রিন্সই এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা বলে ২০১৮ সালেও সিআইএ
সন্দেহ করেছিল বলে খবর বেরোয়া। তবে এর আগে কখনও বিষয়টি প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের
গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সৌদি আরবে মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
তার পূর্বসূরি ডনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে শক্ত অবস্থান নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ক্রাউন
প্রিন্সের বাবা বাদশা সালমানের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে জো বাইডেন ‘সর্বজনীন মানবাধিকার
এবং আইনের শাসনের গুরুত্বের বিষয়ে’ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে হোয়াইট
হাউজ জানিয়েছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি
বাতিলের বিষয়ে ভাবছে বাউডেন প্রশাসন। এক্ষেত্রে মানবাধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া
হচ্ছে।
সৌদি কর্তৃপক্ষ খাশুগজি
হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইস্তাবুলে পাঠানো এজেন্টদের ‘বাড়াবাড়ির’ কথা
বলে আসছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সৌদি আরবের একটি আদালত, গত
বছর ওই সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড করা হয়।
২০১৯ সালে জাতিসংঘের
বিশেষ রেপোর্টিয়ার অ্যাগনেস ক্যালামার্ডও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পিতভবে’ খাশুগজিকে
হত্যার অভিযোগ তোলেন। ‘ন্যায়বিচারের পরিপন্থি’ আখ্যায়িত করে সৌদি আরবের বিচারকেও নাকচ
করেন তিনি।
যেভাবে হত্যা করা হয় খাশুগজিকে
তুর্কি বাগদত্তাকে
বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ আনতে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে
যান ৫৯ বছর বয়সী খাশুগজি। সেখানে গেলে কিছু হবে না বলে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের
রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের (ক্রাউন প্রিন্সের ভাই) কাছ থেকে তিনি আশ্বাস
পেয়েছিলেন বলে বলা হয়ে থাকে। তবে তার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন
প্রিন্স খালিদ।
সৌদি প্রসিকিউটরদের
ভাষ্য মতে, ধস্তাধস্তি করে খাশুগজিকে আটকানো হয় এবং ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তাকে অতিরিক্ত
পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে তার মৃত্যু হয়। এরপর তার মৃতদেহ কেটে টুকরো টুকরো
করে কনস্যুলেটের বাইরে স্থানীয় এক ‘দোসরের’ কাছে দেওয়া হয়।
তবে খাশুগজির দেহাবশেষ
আর পাওয়া যায়নি।
তুরস্কের গোয়েন্দাদের
হাতে পড়া খাশুগজির ঘাতকদের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিংয়ে এই হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসে।
জামাল খাশুগজি এক সময়
সৌদি সরকারের পরামর্শক ছিলেন। রাজ পরিবারের ঘনিষ্ঠও ছিলেন। এক সময় রাজপরিবারের আনুকূল্য
হারান তিনি। ২০১৭ সালে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
এই সাংবাদিক সেখানে
থেকে ওয়াশিংটন পোস্টে মাসে একটি করে কলাম লিখতেন, যাতে প্রিন্স মোহাম্মদের নীতির সমালোচনা
করতেন তিনি।