তিনি বলেছেন, দেশেও যাতে টিকা উৎপাদন করা যায়, সে ব্যবস্থাও সরকার নিচ্ছে।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে এ তথ্য জানান সরকারপ্রধান।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার সুখবর দিতে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, আরও তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য। যাতে করে আমাদের যেটা আছে, সেটা প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ আমরা শুরু করব, সাথে সাথেই যেন আবার টিকা আমাদের হাতে এসে যায়, একটা মানুষও যাতে এই টিকা থেকে বাদ না যায়, তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।”
বাংলাদেশে এখন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত বছরের শেষভাগে চুক্তি করেছিল সরকার। এর মধ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দুই দফায় ৭০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এর বাইরে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে এসেছে ২০ লাখ ডোজ টিকা।
আগামী জুনের মধ্যে মাসিক কিস্তিতে বাকি টিকা সরবরাহ করার কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন প্ল্যাটচফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও চলতি বছরের প্রথমার্ধে সোয়া এক কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা পেতে পারে বাংলাদেশ।
যেসব কোম্পানি টিকা তৈরি করেছে, তাদের অনুমতি নিয়ে দেশেই টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোনো দেশ যদি উৎপাদন করতে না পারে, প্রয়োজনে আমাদের দেশ উৎপাদন করতে পারবে, আমি আমাদের বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিকে ইতোমধ্যে বলেছি যে কারা কারা এটা করতে পারবে, তার জন্য প্রস্তুত থাকা এবং এখানে সিড যাতে আনা যায়, তার ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেটাও আমরা দেখছি।”
জানুয়ারির শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদানের উদ্বোধন করার পর ৭ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের ২৮ লাখের বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
গতবছর নভেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশ যখন টিকা কেনার জন্য সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছিল, তখনও যে এ টিকা গবেষণার পর্যায়ে ছিল, সে বথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা অ্যাডভান্স টাকা দিয়ে বুকিং করে ফেলি, যাতে যেখানেই পাওয়া যায়, আমরা আগে কিনে আনব, আমার দেশের মানুষকে সুরক্ষা দেব, এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত।”
প্রাইমারি থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত- সকল স্কুল-কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারী এবং যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বা হোস্টেলে থাকবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী যে বয়সীদের টিকা দেওয়া যায়, তাদের সবাইকে টিকার আওতার আনার নির্দেশনা দেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
“এটা আমরা দেব, কারণ আমরা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত খুলতে চাই। পড়াশোনার পরিবেশটা ফিরিয়ে আনতে চাই।”
সবাই যাতে টিকা নেয়, সেজন্য গ্রাম পর্যন্ত প্রচার চালানো হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া- এটা তো আমার কর্তব্য, আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুধু না, আমি জাতির পিতার কন্যা, এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেই হিসেবে আমি মনে করি, আমার এটা কর্তব্য, আমরা করে যাচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী নিজে কবে টিকা নেবেন, সংবাদ সম্মেলনে তা জানতে চেয়েছিলেন একজন সাংবাদিক।
উত্তরে সরকারপ্রধান বলেন, “আমি টিকা অবশ্যই নেব, কিন্তু তার আগে দেশের কত পার্সেন্ট মানুষ নিতে পারল, কতজনকে দিতে পারলাম, সেটা আমি আগে দেখতে চাই। কারণ আমার একটা টিকার জন্য যদি আরেকটা মানুষের জীবন বাঁচে. সেটাই তো সবচেয়ে বড় কথা, তাই না?”
নিজের বয়স যে এখন ৭৫ বছর, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি খোঁজ নিচ্ছি, আমাদের একটা টার্গেট করা আছে, এই সংখ্যা পর্যন্ত আগে আমি নির্দিষ্টভাবে দেব, এটা যখন হবে, তারপরে আমারটা আমি নেব, যদি টিকা বাঁচে।”