ক্যাটাগরি

মিয়ানমারে পুলিশের ব্যাপক দমনাভিযান, এক ‘নারী নিহত’

শনিবারের এ দমনাভিযানে এক নারী নিহত ও বহু লোক আহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে।

জতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত অভ্যুত্থানকারীদের থামাতে ‘প্রয়োজনীয় যে কোনো ব্যবস্থা নিতে’ জাতিসংঘকে আহ্বান জানানোর পর সহিংসতার এ ঘটনা ঘটেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।   

প্রতিবাদ থামাতে এ পর্যন্ত সবচেয়ে দৃঢ় উদ্যোগ নিয়ে শনিবার সকাল থেকেই শহর ও নগরগুলোতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

অভ্যুত্থানকারীদের থামাতে জাতিসংঘকে ‘ব্যবস্থা নিতে’ অনুরোধ মিয়ানমারের দূতের

মিয়ানমারে প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা জান্তাপন্থিদের
 

বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গনে সচরাচর যে সব স্থানগুলোতে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয় সেখানে অবস্থান নেয় পুলিশ। লোকজন জড়ো হওয়া শুরু করার পরপরই ধরপাকড় শুরু হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিককেও আটক করা হয়।

লোকজন আবার শ্লোগান দিতে দিতে ও গান গাইতে আশপাশ থেকে বের হয়ে আসে। পুলিশ তাদের দিকে এগিয়ে এলে তার আবার আশপাশের গলিতে ও ভবনে ঢুকে পড়ে। তাদের দমাতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে, স্টান গ্রেনেড ফাটায় ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। 

কিছু বিক্ষোভকারী রাস্তার অপর পাশ থেকে সড়ক অবরোধ ছুড়ে মারে। পরে লোকজনের সংখ্যা কমে গেলেও স্থানীয় সময় সন্ধ্যার আগেও পুলিশ প্রতিবাদকারীদের বিভিন্ন দলকে তাড়া করছিল ও ওপরের দিকে ফাঁকা গুলি ছুড়ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পুলিশ সারাদিন ধরে অসংখ্য লোককে আটক করে ও বেশ কয়েকজনকে পেটায়।

অন্যান্য শহরে পুলিশের ধরপাকড় সত্ত্বেও বিক্ষোভ দেখাতে আরও লোক হাজির হলে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।

স্থানীয় তিনটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, মধ্যাঞ্চলীয় শহর মনুইয়াতে গুলিতে এক নারী নিহত হয়েছেন। কোন পরিস্থিতিতে গুলি করা হয়েছে তা পরিষ্কার হয়নি এবং এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এর আগে শহরটির একজন প্রতিবাদকারী জানিয়েছিলেন, একদল বিক্ষোভকারীকে ঘিরে ফেলার পর পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছুড়েছিল। 

“তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে জলকামান ব্যবহার করেছে, তাদের মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করা উচিত নয়,” রয়টার্সকে বলেছেন প্রতিবাদকারী আয়ে আয়ে তিন্ত।

এক আন্দোলনকারীর ভিডিও ফিডে দেখা গেছে, পরে প্রতিবাদকারীদের বিশাল একটি মিছিল জান্তা বিরোধী শ্লোগান দিয়ে শহরটি সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করছে।

একজন প্রতিবাদকারী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, জনতা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক লোকজনের মুক্তি দাবি করেছে।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর মান্দালয় ও উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন শহরেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা ও গণমাধ্যম জানিয়েছে।

মান্দালয় থেকে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে মিয়ানমার পার্লামেন্টের এনএলডির সদস্য উয়িন মিয়া মিয়াও আছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। পার্লামেন্টে এনএলডির যে দুই জন মুসলিম সদস্য রয়েছেন মিয়া মিয়া তাদের একজন।

নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) ব্যাপক জয় পেলেও তার স্বীকৃতি না দিয়ে সেনাবাহিনী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করে। নির্বাচিত নেত্র্রী সু চি ও এনএলডির অধিকাংশ নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারবন্দি করে রাখে। এর পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

সু চির সঙ্গে আইনজীবীদের দেখা করার ‘অনুমতি মিলছে না’
 

চলতি সপ্তাহে সু চিকে গৃহবন্দি থেকে অজ্ঞাত একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, এনএলডির কর্মকর্তারা এমনটি বলেছেন বলে শুক্রবার দেওয়া উদ্ধৃতিতে জানিয়েছে স্বনির্ভর বার্তা সংস্থা ‘মিয়ানমার নাও’ ওয়েবসাইট। তারপর থেকে সু চি কোথায় আছেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে তিন সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন সামরিক শাসন বিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। কোনো কোনো দিন বিক্ষোভে লাখ লাখ প্রতিবাদকারী যোগ দিয়েছেন। পশ্চিমা দেশগুলো অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে, কয়েকটি দেশ সীমিত কিছু নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।

দেশটির সামরিক বাহিনী প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেছেন, প্রতিবাদ মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করছে এবং পুলিশ রবার বুলেট ব্যবহারের মতো ন্যূনতম শক্তি ব্যবহার করছে।

তারপরও প্রতিবাদ সমাবেশগুলোকে ঘিরে সহিংসতায় শনিবারে আগ পর্যন্ত তিন বিক্ষোভকারী ও একজন পুলিশ নিহত হয়েছেন।