ক্যাটাগরি

কারাগারে মুশতাকের মৃত্যুর খবর জানানো হল আদালতকে

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন রোববার
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের ৬ মে ঢাকা সিএমএম আদালত থেকে সরাসরি ঢাকা
কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় মুশতাক আহমেদকে। পরে ২৪ অগাস্ট তাকে কাশিমপুর
কারাগারে নেওয়া হয়।

“গত বৃহস্পতিবার সাডেন আনকনশাসনেসের কারণে কারা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে জরুরিভিত্তিতে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাত ৮টা ২০ মিনিটে মুশতাককে মৃত ঘোষণা করেন।”

এ ঘটনায় গাজীপুর সদর (জিএমপি) থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে যার নম্বর ১৩।
মৃতদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন চাচাতো ভাই নাফিসুর রহমানের কাছে মুশতাকের
মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়।

বাংলাদেশে কুমির চাষের অন্যতম
উদ্যোক্তা মুশতাকের হাত দিয়েই কুমির রপ্তানি শুরু হয়। এ বিষয়ে একটি বইও লিখেছেন
তিনি।

মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ
সক্রিয় ছিলেন। সেটি কেন্দ্র করেই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পড়েন।

করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গতবছর
৫ মে মুশতাক আহমেদ এবং কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে
তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা
থানার এসআই জামশেদুল ইসলাম তখন বলেছিলেন,
কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ নামের ফেইসবুক একাউন্টে
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক
কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব
পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।

র‌্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর
সিদ্দিকের করা এই মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠন দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক
এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে পরে এ
দুজন জামিনে মুক্তি পান।

তদন্ত শেষে পুলিশ শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে এ
মাসের শুরুতে অভিযোগপত্র দেয়। দিদারুল ও মিনহাজ মান্নান জামিন পেলেও কিশোর ও
মুশতাকের আবেদন নাকচ হয় কয়েক দফা।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১০
ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন এ মামলায়
অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

সেই দায়িত্ব পাওয়ার পর পুলিশের
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপপরিদর্শক ও
মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আফছর আহমেদ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কিশোর ও লেখক মুশতাক
আহমেদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন।

সেই শুনানি হওয়ার আগেই গত ২৫
ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় মৃত্যু হয় ৫৩ বছর বয়সী
মুশতাকের। কীভাবে তার মৃত্যু হল, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না আসায় সন্দেহ প্রকাশ করেন
অনেকে।

মুশতাকের মৃত্যুতে প্রতিবাদ হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি নতুন করে জোরালো হয়ে উঠেছে। কারাগারে বন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে
‘মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গাজীপুর জেলা প্রশাসন মুশতাকের মৃত্যুর বিষয়টি
খতিয়ে দেখতে দুটো তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

আরও খবর-


আজিমপুরে সমাহিত মুশতাক
 

কার্টুনিস্ট কিশোরকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ
 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দি মুশতাকের কারাগারে মৃত্যু
 

বিচারের মুখে কিশোর-মুশতাক-দিদার, মিনহাজ-তাসনিম খলিলরা অভিযোগপত্রে
বাদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কার্টুনিস্ট
গ্রেপ্তার
 

বন্দি মুশতাকের মৃত্যুর দায় এড়াবার নয়: মানবাধিকার কমিশন
 

মুশতাকের মৃত্যু: ঢাকায় ১৩ বিদেশি দূতের উদ্বেগ