ক্যাটাগরি

এখনও সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদের পুনরুৎপাদন চলছে: ইনু

স্বাধীনতার
সুবর্ণ জয়ন্তী এবং দলের ৫০ বছরে
পদার্পণকে সামনে রেখে জাসদের দুই বছরব্যাপী রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অভিযানের
উদ্বোধন উপলক্ষে সোমবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পতাকা শোভাযাত্রা শুরুর আগে এক সংক্ষিপ্ত
সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

ইনু
বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানপন্থি আর নিন্দুকেরা যতই
মিথ্যাচার করুক না কেন, ১৯৭১
সাল পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তুলনা
করে সারা পৃথিবীই আজ স্বীকার করে
যে, স্বাধীনতা বাঙালি জাতির বিকাশের সদর দরজা খুলে দিয়েছিল।

“স্বাধীনতার
৫০ বছরে বাংলাদেশের শাসন-প্রশাসন ব্যবস্থায় অনেক ভুল ত্রুটি, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার
নেতা হত্যা-কর্নেল তাহের হত্যাসহ মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, হত্যা-খুন সামরিক শাসনের রাজনীতি, অন্তর্ঘাতের রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধের রাজনীতি, দেশকে পিছনে টেনে ধরার রাজনীতি হলেও বাংলাদেশ পিছিয়ে পরা অনুন্নত দেশ থেকে আজ উন্নয়নশীল দেশে
উন্নীত হয়েছে।

“যারা
এখনো পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ স্বাধীন করে কি লাভ হল
বলে প্রশ্ন তোলে, তারা পাকিস্তানেরই প্রেতাত্মা। এরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, ৫০ বছর পর
২০২১ সালেও এরা বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া সহ্য করে না। পাকিস্তানপন্থি প্রেতাত্মারাই বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাবার পথে বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করেই চলেছে।”

জাসদ
সভাপতি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিএনপিসহ কতিপয় রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবী
প্রকাশ্যেই জামায়াতসহ পাকিস্তানপন্থিদের সাথে হাত মিলিয়ে রাজনীতি করছে। এরাই দেশের সাম্প্রদায়িকতা-ধর্মান্ধতা-মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের উৎপাদন-পুনরুৎপাদন করে চলেছে।

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে
উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনীতি-রাষ্ট্র-প্রশাসনের ছায়ায় একটি শক্তিশালী দুর্নীতিবাজ-লুটেরাগোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে। এই দুর্নীতিবাজ-লুটেরাগোষ্ঠী
বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভেতর থেকে ঘর কাঁটা ইঁদুর
ও উইপোকার মত কুঁড়ে কুঁড়ে
খাচ্ছে। লুটপাট-দুর্নীতি-অপচয়ে রাষ্ট্র-সমাজ-অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ চলছে।”

হাসানুল
হক ইনু বলেন, ৫০ বছরে দেশ
ও সমাজে সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে।

একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ স্মরণে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পতাকা মিছিল করে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ স্মরণে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পতাকা মিছিল করে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“স্বাধীনতার
৫০ বছরের মাথায় দেশকে আরেক ধাপ উপরে টেনে তুলতে রাজনীতি এবং অর্থনীতির কিছু মৌলিক কিছু বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ, দরকষাকষি, আপস সমঝোতা ও মাঝামাঝির কোনো
পথ নেই। যারা এখনো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতার নামে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে, যারা ১৯৭১ সালের গণহত্যার পক্ষে সাফাই গায়, যারা সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি
অস্বীকার করে- এই পাকিস্তানপন্থি রাজনৈতিক
শক্তি, সাম্প্রদায়িক-ধর্মান্ধ-মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী শক্তি ও তাদের রাজনৈতিক
পার্টনারদের রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করতে হবে।

“একই
সাথে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা গোষ্ঠীকেও নির্মূল করতে হবে। বাংলাদেশকে পেছনের দিকে টেনে ধরার শক্তি পাকিস্তানি প্রেতাত্মা ও দুর্নীতিবাজ-লুটেরা
এই দুই গোষ্ঠীকে সমূলে নির্মূল করেই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”

জাসদ
সভাপতি বলেন, “সাংবিধানকে গোজামিল মুক্ত করে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার নীতিতে রাষ্ট্র
ও সমাজকে পরিচালিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজ-লুটেরা গোষ্ঠীকে নির্মূল করতে আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত
করতে হবে। পুঁজিবাদী অর্থনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বৈশ্বিক মহামারী
কোভিডকালে সারা দুনিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে মুক্ত বাজার অর্থনীতির উপর জনগণের ভাগ্য ছেড়ে দেওয়ার ভ্রান্ত নীতি থেকে বেরিয়ে এসে বৈষম্যের অবসান করতে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে অর্থনীতিকে গণমুখী পরিকল্পিত কায়দার এগিয়ে নিতে হবে।”

২০২১
সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি
এবং ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদ
প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরে পদার্পণ
সামনে রেখে দুই বছরব্যাপী এই ‘রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অভিযান’
শুরু করেছে জাসদ।

অন্যদের মধ্যে
দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন, মীর হোসাইন আখতার, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।