ক্যাটাগরি

ফের বিক্ষোভের প্রস্তুতি মিয়ানমারের প্রতিবাদকারীদের

এক মাস আগে ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা প্রতিবাদ দমাতে রোববার মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষোভে গুলি চালায় পুলিশ, এতে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়।

এ পরিস্থিতিতেও সোমবার ফের রাস্তায় নেমে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ দেখানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।  

নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চির সরকারকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনকারীরা রোববার বিক্ষোভ শুরু করার পরপরই দেশজুড়ে তাদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গনের বিভিন্ন অংশসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে কাঁদুনে গ্যাস, স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ, কিন্তু তাতেও বিক্ষোভকারীদের হটাতে না পেরে গুলি চালালে অভ্যুত্থানের পর থেকে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন পার করে মিয়ানমার।

ইয়াঙ্গনের যে চৌরাস্তায় আগের দিন নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছিল সোমবার সেখানে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর প্রায় ১০টি গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী। পুলিশের বহরে জলকামানও আছে।

উত্তরপশ্চিম মিয়ানমারে কালে শহরে বিক্ষোভকারীরা সু চির পোস্টার নিয়ে মিছিল শুরু করেছেন, তারা গণতন্ত্রের পক্ষে শ্লোগান দিচ্ছেন।

ফেইসবুকে আসা লাইভ ভিডিওতে দেখা গেছে, শান রাজ্যের লাশিওতে বিক্ষোভকারীদের ছোট একটি দল একটি রাস্তায় জমায়েত হয়েছেন, তাদের মাথায় শক্ত ক্যাপ পরা। তারা শ্লোগান দিচ্ছেন আর পুলিশ তাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

“অভ্যুত্থানের পর এক মাস পার হল। গতকাল গুলি করে তারা আমাদের দমাতে চেয়েছে। আমরা আজ আবারও রাস্তায় নামবো,” এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা ই থিনজার মং।

কিছু আন্দোলনকারী কর্তৃপক্ষের বসানো নজরদারি ক্যামেরাগুলো ধ্বংস করার ডাক দিয়েছে। আরেকদল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেপার স্প্রের রেসিপি শেয়ার করেছে যেন তা ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনীর সাদা পোশাকে আসা সদস্যদের হামলা প্রতিরোধ করা যায়।

যারা মিছিলের সামনে থেকে পুলিশ ও সৈন্যদের মোকাবেলা করবে তাদের জন্য লোহার ঢাল তৈরি করেছেন অন্যান্যরা। নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য সংখ্যালঘু জাতির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ওপর কঠোর দমনপীড়ন চালানোর জন্য কুখ্যাত ইউনিটগুলোর অন্তর্ভুক্ত।

রোববারের হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্ট তরুণ আন্দোলনকারী থিনজার শুনলেই ই তার ফেইসবুক পেইজের পোস্টে বলেছেন, “আমি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা করছি।” 

নভেম্বরের নির্বাচনে পার্লামেন্টের বিভিন্ন আসনে জয় পাওয়া আইনপ্রণেতাদের একটি কমিটি বলেছে, রোববারের সহিংসতায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। তবে তাদের দেওয়া এ তথ্য যাচাই করা যায়নি বলে রয়টার্স জানিয়েছে। 

“সামরিক জান্তা কৃত শক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার ও অন্যান্য লঙ্ঘন রেকর্ড করে রাখা হয়েছে এবং তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হবে,” টুইটারে বলেছেন তারা।

রোববারের সহিংসতার বিষয়ে সামরিক বাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি এবং পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর মুখপাত্ররা ফোন কলের কোনো জবাব দেনটি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

রাষ্ট্রায়ত্ত গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার সংবাদপত্র ২৮ ফেব্রুয়ারির তারিখ দেওয়া এক পোস্টে সতর্ক করে বলেছে, “নৈরাজ্যবাদী জনতার বিরুদ্ধে অনিবার্যভাবেই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

আগে সংযম দেখালেও সামরিক বাহিনী এসব আর অগ্রাহ্য করবে না বলে এতে হুঁশিয়ার করা হয়।

মিয়ানমারে কারাবন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স’ জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে ১১৩২ জনকে গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত বা সাজা দেওয়া হয়েছে, এদের মধ্যে ২৭০ জনকে রোববার আটক করা হয়েছে।  

কিছু প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, লোকজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার আগে পুলিশকে তাদের পেটাতে দেখেছেন তারা।

মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শুধু রাস্তায়ই প্রতিবাদ হচ্ছে এমন নয়, দেশটির সরকারি চাকুরিজীবীরা, শহর-নগরগুলোর প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত এবং গণমাধ্যমও দৃঢ় প্রতিবাদে শামিল হয়েছে।

অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো সীমিত কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও কূটনৈতিক চাপ অগ্রাহ্য করা মিয়ানমারের জেনারেলদের ঐতিহ্য। তারা নতুন একটি নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু কোনো তারিখ নির্ধারণ করেনি।