ক্যাটাগরি

‘বেনাপোল দিয়ে ২০১৯ সালেই’ দেশ ছাড়েন পি কে হালদার

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন
ইউনিটের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি
জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেছেন, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর
বিকেল পৌনে ৪টায় যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন পি কে হালদার।

তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম বলতে চাননি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মানিক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, পি কে হালদার যাতে দেশত্যাগ করতে না পরেন, সেজন্য
২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ শাখায় 
(এসবি) চিঠি দেয়  দুর্নীতি দমন কমিশন–দুদক।

ডাকযোগে পাঠানো সেই চিঠি এসবি পায় ২৩
অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায়। পরে এসবি সে চিঠি দেশের সব স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরে দায়িত্বপালনকারী
ইমিগ্রেশন ইউনিটকে পাঠায়।

“ইমিগ্রেশন ইউনিট ওইদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় সেই নির্দেশনা পায়।
কিন্তু তার ঘণ্টা দুই আগে বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পি কে
হালদার দেশ ছেড়ে যান।”

আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, পি কে হালদারের দুটো পাসপোর্টের
তথ্য এ পর্যন্ত জানা গেছে। তার একটি বাংলাদেশি
পাসপোর্ট, অন্যটি কানাডার।

“দুদক এসবিকে যে চিঠি দিয়েছিল, সেখানে পি কে হালদারের পাসপোর্টের কোনো নম্বর ছিল না। তাছাড়া পি কে হালদারের
দুটি পাসপোর্ট, সে বিষয়টিও দুদক উল্লেখ
করেনি।”

ইমিগ্রেশন পুলিশের এ প্রতিবেদন আগামী
১৫ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান এই
আইন কর্মকর্তা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, “হ্যাঁ, পি কে হালদার যাতে দেশত্যাগ করতে না পরেন, তার অনুরোধ ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ শাখাকে চিঠি দেওয়া
হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগের অনুসন্ধান চলছিল, তারই অংশ
হিসেবেই চিঠি দেওয়া হয়েছিল।”

অর্থপাচার সংক্রান্ত একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পি কে হালদারের দেশত্যাগ নিয়ে
দুদক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি
উষ্মা প্রকাশ করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের
হাই কোর্ট বেঞ্চ।

সেদিন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো.
নজরুল ইসলাম তালুকদার জানতে চান, পাসপোর্ট জব্দে
হাই কোর্টের নির্দেশ থাকার পরও পি কে হালদার কীভাবে দেশ থেকে
পালিয়েছেন।

আগামী ১৫ মার্চ মামলাটি পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে এই সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশন পুলিশকে
এর জবাব দিতে বলা হয়।

পি কে হালদারের পালানোর বিষয়ে উষ্মা
প্রকাশ করে ওইদিন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “আমরা তার পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিলাম। এরপরও কীভাবে সে দেশত্যাগ করল? ওইদিন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে কারা ছিল?”

গত বছর ২১ জানুয়ারি বিচারপতি মোহাম্মদ
খুরশিদ আলম সরকারের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ পি কে হালদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স
সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) শীর্ষ ২০ কর্মকর্তার পাসপোর্ট
জব্দের নির্দেশ দেয়।

আর ইমিগ্রেশন পুলিশের বরাত দিয়ে ডিএজি আমিন উদ্দিন মানিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পি কে হালদার দেশ ছেড়েছেন ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা
পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ,
তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল
পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

এই চার কোম্পানি হল- ইন্টারন্যাশনাল
লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল
সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।

এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে
বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।