ক্যাটাগরি

দারিদ্র্য বিমোচনে জোর দিয়ে এডিপি সংশোধন

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সভাপতিত্বে এনইসি সভায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেওয়া
হয়,
যা চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে ৭ হাজার ৫০২ কোটি
টাকা বা ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম।

চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল
২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দ থেকে যে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কমানো হয়েছে, তার পুরোটাই বৈদেশিক সহায়তা থেকে কাটা হয়েছে।

মূল এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিলের
মোট বরাদ্দ কমানো হয়নি, তবে সামগ্রিক চাহিদা
বিবেচনায় দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন
খাতের বরাদ্দ বাড়িয়ে বা কমিয়ে সমন্বয় করা হয়েছে।

বৈঠক পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা
বিভাগের সচিব মো. জয়নুল বারী বলেন, সংশোধিত এডিপিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস হতে ৬৩ হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন করা হবে।

মূল এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে
১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকাই বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। আর বৈদেশিক উৎস থেকে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকার যোগান দেওয়ার কথা ছিল।

ছবি: পিএমও

ছবি: পিএমও

সচিব জানান, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে ১১ হাজার
৬২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ
উৎস হতে ৭ হাজার ৭৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হবে।

এর ফলে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির
সর্বমোট আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৯ হাজার ২৭১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

কোন খাতে কত

পল্লী উন্নয়ন
ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে বরাদ্দ মূল এডিপির ১৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে সংশোধিত
এডিপিতে ১৮ হাজার ২৯০ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার
কল্যাণ খাতের বরাদ্দ ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৪ হাজার ৯২২ কোটি টাকা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে ২৬ হাজার
৪৯২ কোটি টাকা হয়েছে, যা মূল এডিপিতে ২৫
হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা ছিল। বরাদ্দের এই পরিমাণ মোট এডিপির ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা খাতওয়ারি হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

আর সংশোধিত
এডিপিতে ২৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাত। মূল এডিপিতে তা
২৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ছিল। বরাদ্দের এই পরিমাণ মোট এডিপির ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

মূল এডিপির
মত সংশোধিত এডিপিতেও সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন খাতে। তবে মূল এডিপির ৫২ হাজার
১৮৩ কোটি টাকা থেকে তা কমে ৪৯ হাজার ২১৩ কোটি টাকা হয়েছে। বরাদ্দের এই পরিমাণ মোট বরাদ্দের
২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।

সংশোধনে বিদ্যুৎ
খাতের বরাদ্দ মূল এডিপির ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা থেকে কমে ২১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ১০ শতাংশ।

বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে মূল এডিপিতে ১৮ হাজার ৪৪৮ কোটি
টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধনে তা কমে ১১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৮৬
শতাংশ হয়েছে।

এছাড়া সংশোধিত
এডিপিতে কৃষি খাতে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক
৯১ শতাংশ। মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা ৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা পেয়েছে পানি সম্পদ
খাত। আর শিল্প খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

ছবি: পিএমও

ছবি: পিএমও

সচিব জানান এবারের সংশোধিত এডিপিতে মোট
১ হাজার ৭৮৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৬৪০টি, কারিগরী সহায়তা প্রকল্প ১৪৫টি এবং স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের
১০১টি প্রকল্প রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের মধ্যে এর ৪৪২টি প্রকল্প
শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এসব প্রকল্প যথা সময়ে শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় ও চাহিদা
অনুযায়ী বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে বলে জানান সচিব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “একটি প্রকল্প সংশোধন করতে হলে অন্তত ছয় মাস আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে
জানাতে হয়। আগামী জুনের মধ্যে শেষ করার টার্গেটে থাকা এসব প্রকল্প সংশোধনের কোনো প্রস্তাব
এখনো আসেনি। সুতরাং আমরা ধরে নিচ্ছি এই ৪৪২টি প্রকল্প এবার শেষ হচ্ছে।”

সচিব জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে আর্থিক শৃঙ্খলার সুবিধার্থে
আন্তঃখাত সমন্বয় করার মাধ্যমে এক প্রকল্প থেকে অন্য প্রকল্পে বরাদ্দ কম বেশি করে সমন্বয়
করা যাবে। তবে এক এক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ অন্য মন্ত্রণালয় বরাদ্দ সমন্বয় করতে পারবে
না

প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ
হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কানফারেন্সের মাধ্যমে এনইসি সম্মেলন কক্ষ ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ
কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এ সভায় যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।