ক্যাটাগরি

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বৃহত্তর ঐক্য’ চান ফখরুল

মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি
বলেন,
“আজকে দেশের একমাত্র প্রধান সঙ্কট হচ্ছে, আমাদেরকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে…।
আজকে আমাদের গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে, স্বাধীনতার সমস্ত চেতনা লুণ্ঠন করে নিয়েছে।
আজকে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে হবে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে।”

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপির
আয়োজিত এই আলোচনা সভায় ফখরুলের আগে বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও ডাকসুর
সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর।

তাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তাদের বক্তব্যে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলো, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে
চায়, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি করে তারা সরকারের পতন ঘটাতে চায় এবং সত্যিকার
অর্থেই জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে
চায়।

“আসুন আজকে আমরা সেই শপথ নিয়ে আমরা
সেই লক্ষ্যে সংগঠিত হই।”

আওয়ামী লীগ জাতিকে ‘বিভক্ত করেছে’ অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “তারা শুধুমাত্র তাদের নেতা এবং যে সমস্ত নেতৃবর্গ আছেন, তাদেরকে ছাড়া আর কাউকে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য, স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্যে স্বীকৃতি দিতে চায় না।”

তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে আমরা কেন যুদ্ধ করেছিলাম? আমরা তো যুদ্ধে ছিলাম। করেছিলাম যে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আজকে ইসু একটা, ক্রাইসিস একটা- গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

আইজিপির এক বক্তব্যের প্রসঙ্গে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম যে, পুলিশের আইজি সাহেব, তিনি একটা প্রশ্ন রেখেছেন। সেটি হচ্ছে- পুলিশকে
প্রতিপক্ষ বলা হচ্ছে কেন? আমারও একই প্রশ্ন।
আপনি তো একজন শিক্ষিত মানুষ, ব্রাইট অফিসার, সুদর্শন। আপনি কী একবারো
প্রশ্ন করেছেন নিজেকে, যে পুলিশকে কেন প্রতিপক্ষ ভাবছে জনগন? কারা প্রতিপক্ষ ভাবছে?”

আইজিপিকে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আজকে যখন নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে পুলিশ দিয়ে ভোট দিয়ে দেন। অন্য কাউকে দরকার হয়
না। আজকে যখন একটা রাজনৈতিক ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দ নিয়মতান্ত্রিভাবে গণতান্ত্রিভাবে
সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী প্রতিবাদ করতে যায়, তখন
তাদেরকে এই যে, নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন
কেন করা হয়? আজকে কেন বলা হয় থানায় থানায় যে দেশটা
আমরা চালাই, আমরা সরকার তৈরি করেছি, আমরাই এই সব ব্যবস্থা করব। সেই প্রশ্নটা নিজেদেরকে করুন, জানার চেষ্টা করুন, তাহলে
প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।”

মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্নে প্রথম স্বাধীন
দেশের পতাকা উত্তোলনকারী আসম আবদুর রব বলেন, “একাত্তরের আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে একেবারে দলীয়
দৃষ্টিভঙ্গিতে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চায়। এই ধরনের সংকীর্ণতা মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মানের শামিল।”

সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনার দিকে ইংগিত করে তিনি বলেন, “বাঁচতে হলে লড়তে হবে, লড়াই করে জিততে হবে।
এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে।
বাঁশের লাঠির পাল্টা উত্তর দিতে হবে। সেইভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।”

জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের উদ্যোগের সমালোচনা করে রব বলেন, “খেতাব বাতিলের অপচেষ্টা থেকে সরকারকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।” 

আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও তোলেন জেএসডি সভাপতি
রব।

ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়।
তার আগে মিলনায়তনের সামনে বিএনপি মহাসচিবকে নিয়ে জাতীয় পতাকা
উত্তোলন করেন আসম আবদুর রব।

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
বটতলায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ডাকসু ভিপি আসম আবদুর রব বাংলাদেশের
প্রথম পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির
উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার
মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরকার মুক্তিযুদ্ধের
ইতিহাসকে বিকৃত করছে। আমাদের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের কাছে, নতুন প্রজন্মের কাছে
স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা।”

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ছাত্রদল সেদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সেভাবে প্রতিরোধ করেছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি বলতে চাই, এই প্রতিরোধের দেয়াল আরো শক্ত করতে হবে।

“সবাই মিলে আমরা একটা সময় ঠিক করব
এবং এই মঞ্চে যারা আছেন, তাদের জন্য বলি, এই মঞ্চে যারা নেই তাদেরকে বলি, যারা আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে নেই, বাইরে আছেন সবাইকে বলি- চলেন সবাই মিলে এক সাথে বাঁচবার জন্য লড়াই
করি জীবনবাজী রেখে। আমাদের দাবি একটাই- এই অবৈধ সরকারকে চলে যেতে হবে।”

বিএনপির উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে মির্জা
আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আমানউল্লাহ আমান, এসএম ফজলুল হক, খায়রুল কবির খোকন, শিরিন সুলতানা আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।