ক্যাটাগরি

তিতাসের এমডি, পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা চায় আদালত

দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমানানার রুল জারি হতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন আইনজীবী।

সেই সঙ্গে বুড়িগঙ্গ দূষণকারী তিনটি ওয়াশিং প্ল্যান্টের মালিকের বিরুদ্ধে সাত দিনের মধ্যে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এ সংক্রান্ত রিটে করা সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। 

আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করীম।

মনজিল মোরসেদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কেরানিগঞ্জ থানায় গত ১ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর তিনটি মামলা করে। অপরাধ আমলযোগ্য হওয়ার পরও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপার্দ করার ব্যবস্থা নেননি।

“এদিকে আদালতের নির্দেশে বুড়িগঙ্গা দূষণকারী ৩০টি কারখানার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও পরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে কোনো কোনো কারাখানা চালু রয়েছে। এতে বুড়িগঙ্গা সেই দূষণের শিকার হচ্ছেই।”

আইনজীবী মনজিল বলেন, “সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। যদি তা না মানা হয়, তবে সে কর্তৃপক্ষ আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হবে। আদালতের আদেশ অমান্য করে তিতাস ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সংযোগ দিয়ে আদালত অবমাননা করেছে। ফলে সম্পূরক আবেদন করে আরজি জানালে আদালত তাদের ব্যাখা জানতে চায়।”

বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে জনস্বার্থে করা এক রিট মামলার রুল শুনানির ধারাবাহিকতায় গত ৩ জানুয়ারি আদালত ঢাকার কেরানীগঞ্জের ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের জন্য দায়ী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও কারখানার বিরুদ্ধে মামলা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়।

ঢাকা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালককে ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করতে বলা হয়।

ওয়াশিং প্ল্যান্টগুলো হল- আহামদ হোসেন ওয়াশিং, আমেনা ওয়াশিং, সানমুন ওয়াশিং, ইডেন ওয়াশিং, বিসমিল্লাহ ওয়াশিং, লোটাস ওয়াশিং, গ্লোবাল ওয়াশিং, রুবেল ওয়াশিং, আনুশকা ওয়াশ, সততা ওয়াশিং, চঞ্চল ওয়াশিং, আব্দুর রব ওয়াশিং, ঢাকা ওয়াশিং, আজান ওয়াশিং, নিউ সাহারা ওয়াশিং, দোহার ওয়াশিং, রিলেটিভ ওয়াশিং, নিউ নাশা ওয়াশিং, ইউনিক ওয়াশিং, মৌ ওয়াশিং, সেতু ওয়াশিং, কোয়ালিটি ওয়াশিং, জুয়েনা ওয়াশিং, কামাল ওয়াশিং, ওয়াটার কালার ওয়াশিং, পারজোয়ার ওয়াশিং, জিএম ওয়াশিং, কুমিল্লা ওয়াশিং, আছিয়া ওয়াশিং ও লিলি ওয়াশিং।

সেই সাথে কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গার পানিতে বা তীরে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেন ময়লা-আবর্জনা ফেলতে না পারে, সে বিষয়ে তদারকির ব্যবস্থা করতে ঢাকার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেয় আদালত।

এই ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্টের মধ্যে বিএলটি ওয়াশিংয়ের মো. সোহেল, বিসমিল্লাহ ওয়াশিংয়ের মো. মাজুল ইসলাম ভূইয়া ও মেসার্স সানমুন টেক্সওয়াশিংয়ের মো. ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ১৫(১)(২,১০,১২) ধারা অনুযায়ী গত ১ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ‘পরিবেশ ছাড়পত্র এবং ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) ছাড়া কারখানায় ওয়াশিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নির্গমনের মাধ্যমে প্রতি সঙ্কটাসংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত বুড়িগঙ্গার দূষণ করার অপরাধ করেছেন এই তিন প্ল্যান্টের এই ব্যক্তিরা।

৩০টির মধ্যে কেবল তিনটি ওয়াশিং প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে কেন মামলা হয়েছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী আমাতুল করীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিবেদনে বলেছি, সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কারখানাগুলোর মালিক একজন, কিন্তু বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ আরেকজনের নামে। এখন এগুলো যাচাই-বাছাই না করে মামলা করলে পরে দেখা যাবে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তি বা মালিক শাস্তি না পেয়ে নিরাপরাধ ব্যক্তি শাস্তি পেয়েছেন।”

তিনি বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তর অবশ্যই পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিয়েই কাজ করে। তাকেও সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই করতে হয়। মাঠপর্যায়ে গিয়ে বুড়িগঙ্গা দূষণে যাদের কারখানার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা করার আগে একটি প্রস্তানা তৈরি করে অধিদপ্তরের সম্মতি নিতে হয়। বাকিগুলোর বিষয়ে কাজ চলছে।”

ঢাকার অংশে বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ বন্ধে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাই কোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট মামলা করে।

সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি আদালত রুল জারির পাশাপাশি বুড়িগঙ্গা তীরে পুলিশ নিয়োগ, পর্যবেক্ষণ দল গঠন, শ্যামপুর এলাকার শিল্প বর্জ্য যাতে নদীতে ফেলা না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে এবং দূষণ বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দেয়। পরে বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধে বিভিন্ন নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।