সন্তানের বয়স যাই হোক না কেনো, বাবা-মায়ের
বিচ্ছেদ তার জন্য সবসময়ই কষ্টকর। তবে সন্তান যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয় সেক্ষেত্রে বিচ্ছেদ
মেনে নেওয়া তার জন্য কিছুটা সহজ হয়।
তবে বাবা-মায়ের সম্পর্কের ফাটল সন্তানের
বয়স হিসেব করে দেখা দেয় না। আর মাঝে মধ্যে সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে ওঠে যে তখন বিচ্ছেদই
হয় একমাত্র সমাধান।
মনবিজ্ঞানীরা হিসেব করার চেষ্টা করেছেন
সন্তানের কোন বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ তার জন্য সবচাইতে ধ্বংসাত্বক।
সম্পর্ক-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত
প্রতিবেদনে, মেক্সিকো’র শিশু মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. স্কট ক্যারল বলেন, “সন্তানের বয়স যখন
দুই বছরের নিচে, একমাত্র তখনই বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ সন্তানে ওপর সরাসরি কোনো প্রভাব
ফেলে না।”
“সন্তানের লালন পালনে বিভিন্ন সমস্যা
দেখা দেবে ঠিক তবে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের কষ্টটা বোঝার ক্ষমতা তখন থাকে না। সেই ক্ষমতা
তৈরি করে তিন বছর বয়স থেকে, যখন তার মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতার বিকাশ শুরু হবে। তবে
দুই বছর বয়সেও স্মৃতি তৈরি হয়, আপনার বুঝতে পারবে পরিবর্তনটা, অনুভবও করতে পারবে কাছের
কারও অনুপস্থিতি।”
১১ বছর বয়সে এসে শিশুর মানসিকভাবে আঘাত
পাওয়ার ক্ষমতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। এ পর্যায়ে সন্তান বাবা-মায়ের সম্পর্কের মর্ম
বোঝার সময় পেয়েছে অনেকটা। পরিবারের সঙ্গে তার গভীর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি
সন্তান এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, সে অল্পতেই রেগে যায়, ফলে পরিবারের ভাঙন সহ্য করা তার
পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
ক্যারল ব্যাখ্যা করেন, “বাবা-মায়ের তালাকের
চাইতেও কঠিন বিষয় হল তাদের মধ্যকার মত-বিরোধ, কলহ। আর তা যদি সন্তানের সামনে ঘটে, তবে
তার মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। পরিস্থিতিকে আরও হৃদয় বিদারক করে তোলে সন্তানের মাধ্যমে
বাবা-মায়ের কথপোকথন চালানো প্রবণতা।”
“এই বিবেচনায় এক অর্থে তালাক ভালো। কারণ
দাম্পত্য কলহ যখন প্রচণ্ড নোংরা পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন সন্তান এবং নিজেদের স্বার্থেই
আলাদা হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।”
বয়ঃসন্ধিকালের আগে বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ
সন্তানের মনে যে অনুভূতি তৈরি করে তার সারমর্ম হল, তার বাবা-মা এখন বাবা-মায়ের মতো
আচরণ করেন না।
দুজনের সঙ্গে একসঙ্গে খুব একটা সাক্ষাৎ
হয়না, ফলে সন্তান মনে করে তার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ নেই।
আর বিচ্ছেদের পর বাবা-মা সন্তানের প্রতি
ততটুকু নজর দেন না যতটা বিচ্ছেদ না হলেও দেওয়া হতো। এটাই সন্তানের জন্য সবচাইতে খারাপ।
এই অবস্থায় সন্তান মনে করে তারই কোনো
ভুলে হয়ত সবকিছু হয়েছে। কেনো আমার বাবা-মা আমাকে সহ্য করতে পারে না, এমন প্রশ্ন মনকে
কলুসিত করে প্রতিনিয়ত।
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ কেনো হয়েছে তা বোঝার
মতো মানসিক বিকাশ হয় বয়ঃসন্ধিকাল পার হওয়া পর এবং তা মেনে নিতে পারার সম্ভাবনাও তৈরি
হয় তখনই।
অনেকসময় সন্তানরাই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের
সমাধান আনতে পারে। তারা হয়ে ওঠে বাবা-মায়ের চাইতেও পরিণত মানসিকতার মানুষ।
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের আগে যদি সন্তান
মানসিকভাবে পরিণত হয় তবে তাদের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ঘটনা প্রায়শই চোখে পড়ে।
সাময়িক মনকষ্ট তো থাকবেই। তবে বেশিরভাগ
সন্তানই নতুন পরিস্থিতেকে মন থেকে মেনে নিতে সক্ষম হয়।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন