এরা হলেন বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুস সালাম, সদর উপজেলার পূর্ব হাজারবিঘা বটতলা সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম এবং মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান।
এই অভিযোগে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে আগামী ৮ মার্চের মধ্যে তার লিখিত জবাব দিতে বলেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি ও সিনিয়র মাদ্রাসা শাখার সহকারী পরিচালক মো. আফাজ উদ্দিনের স্বাক্ষরিত দুটি চিঠিতে এই কথা জানানো হয়।
একটি চিঠিতে বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুস সালামকে বলা হয়, পূর্ব হাজারবিঘা বটতলা সিনিয়র মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয় এবং উপাধ্যক্ষ পদে এমপিওভুক্তির জন্য ওই মাদ্রাসা অধ্যক্ষের আবেদন বরগুনা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে অনলাইনে পাঠানো হয়।
“ওই আবেদন যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বোর্ডে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি হিসেবে আপনি (কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুস সালাম) উপস্থিত থেকে ফলাফল শিট ও নিয়োগ রেজুলেশনে সুপারিশ করেছেন।
“কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম খানকে মনোনীত করা হয়।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, “মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মনোনীত প্রার্থী না হয়েও আপনি অবৈধভাবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মনোনীত ব্যক্তির পরিবর্তে নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত থেকে নিয়োগে সুপারিশ করেছেন, যা অবৈধ ও সুস্পষ্ট জালিয়াতি মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে, যা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
তাই তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে না তার জবাব চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।
ওই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষকে পাঠানো অন্য আরেকটি চিঠিতে বলা হয়েছে, এ মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ নিয়োগে মাদ্রাসা বোর্ডের মহাপরিচালকের মনোনীত প্রতিনিধিকে নিয়োগ বোর্ডে না রেখে বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষকে নিয়োগ বোর্ডে রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এরপর উপাধ্যক্ষ পদ এমপিওভুক্তির জন্য মাদ্রাসার আবেদন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে অনলাইনে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর পাঠানো হয়, যা সুস্পষ্ট জালিয়াতি মর্মে প্রতীয়মান হয়।
“এছাড়া এমপিওভুক্তির বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জমা দেওয়া চিঠিটি সরকারি কলেজের প্রতিনিধি হিসেবে মো. আব্দুস সালামের স্বাক্ষরিত, যা মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক জারি করা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নয় এবং পত্রের অনুমোদনকারী ও প্রেরকের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।”
তাই জালিয়াতির কারণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আব্দুস সালামসহ সংশ্লিষ্টদের এমপিও স্থগিতের পাশাপাশি সভাপতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ব হাজারবিঘা বটতলা সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম বলেন, “মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি সংগ্রহের জন্য আমি মাদ্রাসা বোর্ডের একজনের দ্বারস্থ হই। কিন্তু সেখান থেকে আমাকে প্রকৃত বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে একটি জাল বিজ্ঞপ্তি দেন। ওই জাল বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম আরও বলেন, “আমি ইতোমধ্যেই আমার লিখিত জবাব মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে দাখিল করেছি।”
মাদ্রাসাটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
তবে সিদ্দিকুর রহমানের লিখিত জবাব প্রসঙ্গে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম বলেন, “তার লিখিত জবাবও আমি সঙ্গে করে ঢাকায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের জমা দিয়েছি।”
বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুস সালাম বলেন, “পূর্ব হাজারবিঘা বটতলা সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম নিজে এসে কলেজের অফিসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চিঠি দিয়ে যান। তার দেওয়া চিঠি অনুযায়ী আমি ওই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ নিয়োগের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি।”
অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম আরও বলেন, “আমি কারণ দর্শানোর চিঠি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝতেই পারিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দেওয়া চিঠিটি জাল ছিল। তাই আমি সত্য এবং উপযুক্ত জবাব ইতোমধ্যেই লিখে ফেলেছি। আগামীকাল ওই জবাব আমি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাব।”