ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে তার মৃত্যু হয়েছে।
এইচ টি ইমামের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। মাসখানেক ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য।
রাত সোয়া ১টার দিকে চিকিৎসকরা এইচ টি ইমামকে মৃত ঘোষণা করেন বলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা এইচ টি ইমাম ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হন তিনি।
এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানান, এইচটি ইমামের মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে হেলিকপ্টারে করে উল্লাপাড়ায় তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। সকাল ১১টায় উল্লাপাড়া আকবর আলী সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা হবে।
জানাজা শেষে কফিন আবার ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।
বাদ আছর গুলশানের আজাদ মসজিদে আরেক দফা জানাজার পর এইচটি ইমামের মরদেহ নেওয়া হবে বনানী কবরস্থানে।
সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হবে। পরে বনানীতেই তাকে দাফন করা হবে।
এইচ টি ইমাম। ফাইল ছবি: মাহমুদ জামান অভি
হোসেন তৌফিক ইমামের জন্ম ১৯৩৯ সালে, পরে তিনি এইচ টি ইমাম নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন।
বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জেলায়। ম্যাট্রিক পাস করেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে। আবা ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে।
রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি নিয়ে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি নেন। তখন তিনি বাম ছাত্র সংগঠনে যুক্ত ছিলেন।
পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে। এরপর পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করে লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিপরিষদের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি যোগাযোগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবও হন।
ইসিতে এইচ টি ইমাম। ফাইল ছবি
অবসর নেওয়ার পর আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন এইচ টি ইমাম। দলের নির্বাচন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন, যে কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন। প্রথমে তিনি জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনা বিষয়ে এইচ টি ইমামের রচিত কয়েকটি গ্রন্থকে বেশ গুরুত্ব দেন গ্রন্থ সমালোচকরা।
এইচ টি ইমাম নিজে কখনও নির্বাচনে না দাঁড়ালেও তার ছেলে তানভীর ইমাম সিরাজগঞ্জের একটি আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।