বৃহস্পতিবার
সকাল ১০টায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি ঢাকার বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটিতে নামেন। সেখানে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল
মোমেন।
দুপুর
সোয়া ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে জয়শঙ্করের।
পরে
বিকাল ৫টায় ভারত ভবনে (পুরনো হাই কমিশন ভবন) একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।
এর আগে বুধবার পররাষ্ট্র
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের
বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গ
কথা বলেন ।
তিনি বলেন, “সামনে আমাদের মুজিববর্ষের চলমান কর্মসূচির অংশ হিসাবে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৭ মার্চ থেকে
২৬ মার্চ বেশ কিছু অনুষ্ঠান সাজানো হচ্ছে।
”সেটা সামনে রেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর একটি সফর হওয়ার কথা রয়েছে। সব সফরকে ঘিরে
আমাদের প্রত্যাশা থাকে, অন্ততপক্ষে জটিল বিষয়গুলোকে আলোচনা করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার থাকে, এগুলো নিয়ে আলাপ করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন।”
মোদীর সফর ঘিরে যোগাযোগ বা ‘কানেক্টিভিটির’ ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টি জোর পেয়েছে মন্তব্য করে শাহরিয়ার আলম বলেন, “যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। নতুন একটি ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি আশা করি, আমরা চালু করতে পারব খুব শিগগিরই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত
ঘোষণা দেবে।”
পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়েও আলোচনা হবে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কোভিড-১৯ কেবল একটি
স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা নয়, এটি অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থাও তৈরি করেছে। বিশেষ করে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো একটি বড় অর্থনৈতিক সমস্যার
মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটার একটি বড় প্রভাব কিন্তু
আমাদের মত সরবরাহকারী দেশগুলির
উপর পড়তে পারে।
”ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁচামাল আসে। যেগুলো দিয়ে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য চাঙ্গা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও হবে। সেক্ষেত্রে এই কাঁচামালগুলি এবং
আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধাগুলি কীভাবে দূর করা যায়, সেগুলো আলোচনা হবে।”
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের আলোচনায় সাম্প্রতিক সময়ে ‘অগ্রগতি’ হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে নদী বা পানি বিষয়ক
যে বৈঠকগুলি হচ্ছিল না, সেগুলির ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে যে কোনো কিছু
চূড়ান্ত হবে, আমরা জোরালোভাবে তা প্রত্যাশা করি
না।
”কারণ, কয়েকদিন পরে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আছে। ডেলিবারেবলস যেগুলি, আমরা সেগুলো বড় সফরের জন্যই
রেখে দিই। তবে চেষ্টা করা হবে, সেগুলো যতটুকু পর্যন্ত চূড়ান্ত করে রাখা যায়, বাকিটা সময়ই বলবে।”
তিস্তা চুক্তির বিষয়টি বাংলাদেশের অগ্রাধিকারে থাকবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা আমাদের সব সময়ের প্রায়োরিটি।”
‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ’ চুক্তির বিষয়টি দু’দেশের আলোচনার
টেবিলে রয়েছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা
যাচাইয়ে একটি যৌথ সমীক্ষা করার জন্য এর আগে দুই
প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে যোগাযোগ,
বাণিজ্য বাধা দূর করা এবং নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশপত্র পেয়েছি। সামনের তিন বা ছয় বছরে
আমাদের অর্থনীতি আরও গতিশীল করার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা এটা আজকের এজেন্ডা নয়।
”আমাদের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ থাকার পরও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে, যেটাকে অনেকে মনে করেছিলেন আভ্যন্তরীণ ঝুঁকি থাকতে পারে, আমি ট্র্যানজিটের কথাটি বলছি, সেটা এখন আর বড় কোনো
ইস্যু মোটেই নয়। কিন্তু সেখানে দক্ষতা এবং বাধাহীন কীভাবে করা যায়…।”
ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশের যানবাহনকে সরাসরি ভুটান ও নেপালে যাওয়ার
সুযোগ করে দিয়েছে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, “এটা আমাদের জন্য একটি বড় পাওয়া।”
ভারতের ডাউকি ও বাংলাদেশের তামাবিল
অংশে একটি ‘পেট্রাপোল’ নির্মাণ ’প্রায় হয়েই’ গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এই কাজগুলির মধ্য
দিয়ে সামনে দিনে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারে শুধু কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ না, আরও অনেক কিছু আসতে পারে।”
নতুন করে স্থলবন্দর চালু এবং একটি স্থলবন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু
রাখার যে পরিকল্পনা দুই
দেশ করছে, সে প্রসঙ্গে এক
প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা অব্যাহতভাবে রিভিউ করে যাব এবং ভারতও এটা অনুভব করে। কারণ তাদের রপ্তানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
“এক্ষেত্রে কোন বর্ডারটি খোলা যায়, ফ্লাইটের সংখ্যা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটা আলোচনায় থাকবে।”
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির বিষয়টি যেসব কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো খুব দ্রুত সরাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য ভারতের চেন্নাইতে বাংলাদেশের একটি সহকারী হাই কমিশন খোলার উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পরিকল্পনা শুধু নয়, চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে গেছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগে যে দাপ্তরিক কার্যক্রম,
সেটাও সম্পন্ন করেছি।”