টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মাঝেমধ্যেই উপহার দেয় বিচিত্র কিছু। এই ম্যাচে সমাবেশ
ঘটল যেন তেমনই অনেক কিছুর! ঘটনার ঘনঘটার ম্যাচে অ্যান্টিগায় লঙ্কানদের ৪ উইকেটে হারিয়ে
তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেল ক্যারিবিয়ানরা।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকালের এই ম্যাচের প্রথম ভাগ ছিল মোটামুটি নিস্তরঙ্গ।
কুলিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ডের অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচে খানিকটা মন্থর উইকেটে নিয়ন্ত্রিত
বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ১৩১ রানে বেঁধে রাখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দ্বিতীয় ভাগে ম্যাচ হয়ে ওঠে নাটকীয়তা আর উত্তেজনার মঞ্চ। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে
পাওয়ার প্লের রেকর্ড, এরপর হ্যাটট্রিক, ওভারে ছয় ছক্কা, আবার টানা দুই বলে উইকেট, সবকিছুর
পর ক্যারিবিয়ানদের জয় ৪১ বল বাকি রেখেই।
কোভিড বিরতির পর ক্যারিবিয়ানের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটিতে আলোচনার অনেক রসদ
জমা হয় শুরু থেকেই। প্রায় ৯ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলতে নামেন ৩৯ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার ফিদেল এডওয়ার্ডস, ৪১ বছর বয়সী ক্রিস গেইল ফেরেন ২
বছর পর। জেসন হোল্ডার ফেরেন প্রায় দেড় বছর পর।
শ্রীলঙ্কার হয়ে দিনেশ চান্দিমাল এই সংস্করণে ফেরেন প্রায় আড়াই বছর পর। অ্যাকশন
শুধরে বোলিংয়ের অনুমতি পাওয়া স্পিনার দনাঞ্জয়া ফেরেন আড়াই বছর পর। ভিসা জটিলতায় নিয়মিত
অধিনায়ক দাসুন শানাকা না থাকায় প্রায় সাড়ে তিন বছর পর দেশকে নেতৃত্ব দেন অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো
ম্যাথিউস।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা লঙ্কানরা তৃতীয় ওভারে হারায় ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকাকে।
অভিষিক্ত অফ স্পিনার কেভিন সিনক্লেয়ার পান প্রথম উইকেটের স্বাদ।
তবে নিরোশান ডিকভেলা ও পাথুম নিসানকার ব্যাটে লঙ্কানরা এগিয়ে যায় ভালোভাবেই।
দ্বিতীয় উইকেটে দুজন যোগ করেন ৫১ রান। ১০ ওভার শেষে দলের রান ছিল ৭১।
এরপর থেকেই শুরু উল্টোযাত্রা। হোল্ডারের স্লোয়ার ফুলটসে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড
হন ডিকভেলা (২৯ বলে ৩৩)। অভিষেকে সম্ভাবনার ঝিলিক দেখিয়ে নিসানকা বিদায় নেন ৩৪ বলে
৩৯ রান করে।
এরপর চান্দিমাল, ম্যাথিউস, থিসারা পেরেরার মতো অভিজ্ঞরা পারেননি দাঁড়াতে। লোয়ার-মিডল
অর্ডারে ভানিদু হাসারাঙ্গা ও অভিষিক্ত আসেন বান্দারা পারেননি তেমন কিছু করতে। শেষ ৬
ওভারে লঙ্কানরা যোগ করতে পারে মাত্র ৩৫ রান।
ক্যারিবিয়ানদের রান তাড়ায় প্রথম ওভার থেকেই শুরু হয় তাণ্ডব। ম্যাথিউসকে টানা
তিন ছক্কায় ওড়ান এভিন লুইস। দ্বিতীয় ওভারে দনাঞ্জয়াকে ছক্কা মারেন লেন্ডল সিমন্স। পরের
ওভারে লুইস-সিমন্স মিলে দুশমন্থ চামিরার বোলিংয়ে নেন ২১ রান।
রান উৎসবের মধ্যেই চতুর্থ ওভারে হ্যাটট্রিক। দনাঞ্জয়ার এই ওভারও শুরু হয় লুইসের
ব্যাটে চার হজম করে। ৩.১ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৫২। ৩ বল পরই সেটা হয়ে যায় ৩ উইকেটে
৫২!
ছক্কা মারার চেষ্টায় লুইস (১০ বলে ২৮) ধরা পড়েন লং অফে। ফেরার ম্যাচে তিনে
নেমে গেইল এলবিডব্লিউ প্রথম বলেই। পরের বলেই কটবিহাইন্ড নিকোলাস পুরান। উল্লাসে মাতেন
দনাঞ্জয়া।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটি চতুর্দশ হ্যাটট্রিক, শ্রীলঙ্কার চতুর্থ।
রানের স্রোত তবু থামেনি। হ্যাটট্রিক ওভারটিও বাউন্ডারিতে শেষ করেন সিমন্স।
লেগ স্পিনার হাসারাঙ্গা নিজের প্রথম ওভারে থামান সিমন্সকে। ১৫ বলে ২৬ রান করা
ব্যাটসম্যান আউট হন সুইপ করতে গিয়ে।
উইকেট হারিয়ে সতর্ক হবেন কী, উল্টো দনাঞ্জয়ার করা পরের ওভারেই ছক্কার ঝড়ে পোলার্ড
নাম লেখান রেকর্ড বইয়ে। ছয় বলে ছয় ছক্কা!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই কীর্তি আগে ছিল কেবল টি-টোয়েন্টিতে যুবরাজ সিং ও ওয়ানডেতে
হার্শেল গিবসের।
৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ৯৮ রান, পাওয়ার প্লেতে রেকর্ড!
নাটকীয়তার তখনও বাকি। পরের ওভারেই হাসারাঙ্গা পরপর দুই গুগলিতে এলবিডব্লিউ
করে দেন পোলার্ড ও ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে। ১১ বলে ৩৮ করে থামে পোলার্ড ঝড়।
এবার আর হ্যাটট্রিক হতে দেননি ডোয়াইন ব্রাভো। পরের ওভারের প্রথম বলে দনাঞ্জয়াকে
আরেকটি ছক্কা মারেন হোল্ডার, তাতে তার টানা ৭ বলে আসে ছক্কা!
এরপর আর নাটক হয়নি তেমন। হোল্ডার ও ব্রাভো ঠাণ্ডা মাথায় দলকে নিয়ে যান লক্ষ্যে।
নুয়ান প্রদিপকে ছক্কায় ম্যাচ শেষ করেন হোল্ডার (২৪ বলে ২৯*), ম্যাচের সঙ্গে ঠিক মানানসই!
ব্রাভো অপরাজিত থাকেন ১৭ বলে ৪ রানে।
দনাঞ্জয়ার ৪ ওভারে আসে ৬২ রান, হ্যাটট্রিক করা বোলারের সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের
রেকর্ড। ছক্কা তাতে ৮টি। আরাধ্য হ্যাটট্রিক নাকি বেদম মার, কে জানে কোনটি বেশি মনে
রাখবেন দনাঞ্জয়া!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৩১/৯ (ডিকভেলা ৩৩, গুনাথিলাকা ৪,
নিসানকা ৩৯, চান্দিমাল ১১, ম্যাথিউস ৫, থিসারা ১, হাসারাঙ্গা ১২, বান্দারা ১০, দনাঞ্জয়া
৯*, চামিরা ২; সিনক্লেয়ার ৩-০-২৬-১, এডওয়ার্ডস ৪-০-২৯-১, হোল্ডার ৪-০-১৯-১, ম্যাককয়
৪-০-২৫-২, ব্রাভো ৪-০-২৬-১, অ্যালেন ১-০-৪-১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৩.১ ওভারে ১৩৪/৬ (সিমন্স ২৬, লুইস ২৮, গেইল
০, পুরান ০, পোলার্ড ৩৮, হোল্ডার ২৯*, অ্যালেন ০, ব্রাভো ৪*; ম্যাথিউস ১-০-১৯-০, দনাঞ্জয়া
৪-০-৬২-৩, চামিরা ৩-০-২৯-০, হাসারাঙ্গা ৪-০-১২-৩, বান্দারা ১-০-২-০, প্রদিপ ০.১-০-৬-০)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: কাইরন পোলার্ড।