স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে দুরন্ত টেলিভিশনের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমার সোনার বাংলা’য় শিশুশিল্পীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন আবুল মোমেন ও শীলা মোমেন।
নিজেদের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল সেটি তারা দুজনে জানালেন গ্লিটজকে।
প্রথমেই তারা বলেন, “আমার সোনার বাংলা একটি নতুন ধরনের অনুষ্ঠান। এতে দু’জন শিশুকে সঙ্গে নিয়ে আমরা দু’জন শিশুদেরকে ইতিহাসের গল্প বলেছি। ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের ঘটনা থেকে কাহিনী শুরু, শেষ হয়েছে ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিয়ে। সোয়া দু’শ বছরের ইতিহাস ২৬টি পর্বে আমরা দু’জনে বলেছি। চেষ্টা করেছি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সব উপাদান ধরার, আবার আমাদের বলা যেন শিশুদের বোধগম্য হয় সে চেষ্টাও ছিল। শুরু হলে শিশু-দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায় বোঝা যাবে আয়োজনটা কেমন হল, আমরাও বা কতটা পেরেছি।”
এরআগে একসঙ্গে আর কাজ করা হয়নি তাদের। এই প্রথম তাই হয়তো একটু বেশি অন্যরকম অভিজ্ঞতা তাদের দুইজনের। তাও আবার শিশুদের সঙ্গে। এই অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে জানান, “আমাদের তো ৪৫ বছরের অভিজ্ঞতা এ বিষয়ে অবশ্য শীলা বেশি এগিয়ে থাকবে। পরিচালক ও তাঁর টিম ভালো বলতে পারবেন, কেমন করেছি আমরা। আমাদের দিক থেকে বলব, কাজটায় বিস্তর চ্যালেঞ্জ থাকলেও কাজের গতি ভালোই ছিল। আমরা উপভোগ করেছি।”
ইতিহাস ও রাজনীতি গভীরভাবে যুক্ত, কিন্তু এই অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য দর্শক শিশুরা, সেক্ষেত্রে কিভাবে এটাকে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করছেন এই প্রসঙ্গে তারা বলেন, “সমকালের ইতিহাসে রাজনীতি যত বাধা হয়ে দাঁড়ায় অতীতের ইতিহাসে তা অনেকটা কমে আসে। তাছাড়া আমরা দু’জনেই ষাটের দশক থেকেই বাঙালি জাতীয়তার উন্মেষে নানা ধরনের কাজে যুক্ত ছিলাম, মুক্তিযুদ্ধেও কাজ করেছি, পরেও এ চেতনা ফিরিয়ে আনার সাংস্কৃতিক সংগ্রামে যুক্ত ছিলাম, আছি, তাই নিজেদের একটা ইতিহাস বোধ তো তৈরি ছিল। তাতে খুব অসুবিধা হয় নি রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে।”
তবে নিজেদের কথা তেমন বলেননি তারা সেটাও জানান গ্লিটজকে।
কিন্তু ইতিহাস নিয়ে কতা বলতে পিছপা নন তারা। বলেন, “মাঝে অনেক বছর ইতিহাস তো পড়ানোই হয় নি, তার ওপর ইতিহাস বিকৃতির ব্যাপারও ছিল। ফলে ছোটবড় সবার মধ্যেই ইতিহাস বোধ ও চেতনায় সমস্যা দেখা যায়।
মানুষ যেমন একটা স্থানে বাস করে তেমনি কালেও তার বাস। আজকাল স্থান পরিবর্তনের ব্যাপারও ঘটছে বেশ। এই বিশ্বায়নের যুগে এখনকার শিশুদের যুগপৎ নিজ দেশ ও বিশ্ব নাগরিক হতে হবে। আর বরাবরই তো কালের প্রবাহের মধ্যেই আমাদের বাস। এই প্রবাহ সম্পর্কে ধারণা থাকাও দরকার। সেই সাথে এতে নিজের অবস্থান ও ভূমিকা নির্ধারণেও নিজের সক্ষমতা প্রয়োজন। এ তো ইতিহাস-চেতনার বিষয়। এটি না থাকলে মানুষ হবে ভাসমান, শ্যাওলার মত, গাছ হওয়া কঠিন, বৃক্ষ হওয়া দূরের কথা। সমাজের দিকে তাকালেই এই সমস্যাটা বোঝা যাবে। ইতিহাসই শিকড়, তার বিস্তার ঘটে কালের প্রেক্ষাপটে।
এই অনুষ্ঠানটি শিশুরা গ্রহণ করবেন কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, “প্রথমত এটি নতুন ধরনের অনুষ্ঠান, দ্বিতীয়ত দুরন্তের টিম খুব যত্ন করে কাজটা করেছে। তাছাড়া দুরন্ত তো শিশুদের জনপ্রিয় চ্যানেল। ইতিহাসে অনেক গল্প, বিস্তর চরিত্র, আছে উত্থানপতন, সাফল্য- পরাভব, উত্তেজনা-প্রশান্তি, ষড়যন্ত্র-অন্তর্ঘাত, নায়ক-খলনায়ক, এসব বৈচিত্র্য নিয়ে অনুষ্ঠানটি শিশুদের আকৃষ্ট না করার কারণ তো নেই। অনেক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলি শিশুদের একটু চাপমুক্ত হয়ে জ্ঞান, সৃজন ও উপভোগের নানা রসদ থেকে পছন্দমতো বেছে নিতে দিন। তাই অভিভাবকদের বলব; এ অনুষ্ঠান জোর করে দেখানোরও দরকার নেই, দেখতে বাধাও দেবেন না। তবে একটু নতুন ধরনের অনুষ্ঠান বলে হয়ত আগ্রহ সৃষ্টির জন্যে কিছু সহায়ক উদ্দীপনামূলক কথা বলা যায়।”