‘স্টিল’য়ের বা ঢালাই লোহার হাঁড়ি পাতিলের
চাইতে ‘কার্বন স্টিল’য়ের পাত্র হালকাও হয়। তাছাড়া অল্পতেই গরম হয়, রান্নার সময় পাতিলে
লেগে যায় না। যাকে বলে ‘নন-স্টিক’ পাত্র।
সাধারণ বিজ্ঞানের সূত্রানুসারে দুই বা
ততোধিক ধাতুর মিশ্রণে তৈরি করা হয় কার্বন স্টিলের পাত্র। সাধারণভাবে বলতে গেলে মিশ্রণের
উপাদান হল ঢালাই লোহা ও স্টেইনলেস স্টিল।
লোকমুখে এর বিভিন্ন নাম প্রচলিত থাকলেও
বাণিজ্যিক ভাষায় একে বলা হয় ‘কার্বন স্টিল’। সব ধরনে রান্নার জন্য উপযোগী এই মিশ্র
ধাতুর পাত্র।
বিশ্বের বেশিরভাগ রাঁধুনি এই ধরনের পাত্র
রান্নার জন্য সেরা মনে করেন।
আর সেসব কারণ ও সুবিধাগুলো জানানো হল
গৃহস্থালী-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে।
বহুমুখী ব্যবহার: অন্যান্য যেকোনো ধাতব পাত্রের তুলনায় ‘কার্বন স্টিল’য়ের তৈরি পাত্র গরম হয়
দ্রুত। স্থায়ীত্বের বিবেচনায়ও এটি বেশ টেকসই। চুলা থেকে ওভেন সবখানেই এটি ব্যবহার করা
যায়। বৈদ্যুতিক চুলা, ‘গ্রিল মেশিন’ এবং ‘ক্যাম্প ফায়ার’য়ের সাহায্যে রান্নাতেও এই
ধাতুর তৈরি পাত্র ব্যবহার করা যায় নিশ্চিন্তে।
তাপ শোষণ করে দ্রুত: সাধারণত রান্নার পাত্র তৈরিতে যে ঢালাই লোহা ব্যবহার করা হয় তার তুলনায় অনেক
কম সময়ে তাপ গ্রহণ করে ‘কার্বন স্টিল’। আকারভেদে ১০ থেকে ৩০ মিনিট লাগে একটি ঢালাই
লোহার পাত্র গরম করতে। অপরদিকে ‘কার্বন স্টিল’ মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিনিটেই গরম হয়।
এতে রান্না যেমন দ্রুত হয়ে যায়, তেমনি সাশ্রয় হয় জ্বালানি।
আঠালো-ভাব নেই: ঢালাই লোহার তৈরি পাত্র হয় খসখসে, রান্নার সময় খাবার পাত্রের সমতলে লেগে যায়
সহজেই। তবে ‘কার্বন স্টিল’য়ের সমতল মসৃণ হয় এবং তাতে থাকে ‘নন স্টিকি’ গুণ। ফলে খাবার
লেগে যাওয়া ঝুঁকি কমে যায় অনেকটা। তবে নতুন পাত্রতে শুরুতে তেল মাখিয়ে গরম করতে হবে।
এতে মরিচা পড়বে না এবং রান্নার কাজ সহজ হবে।
হালকা ওজন:
ঢালাই লোহা আর ‘স্টেইনলেস স্টিল’ মিশ্রণে তৈরি হলেও ‘কার্বন স্টিল’য়ের তৈরি রান্নার
পাত্র হয় পাতলা এবং হালকা। ১০ ইঞ্চির সাধারণ কড়াইয়ের ওজন যদি হয় পাঁচ থেকে ছয় পাউন্ড,
তবে এই আকারের ‘কার্বন স্টিল’য়ের কড়াইয়ের ওজন হবে তিন থেকে চার পাউন্ড।
দাগ পড়ে না:
‘নন স্টিকি’ পাত্রের সাধারণ সমস্যা হল ব্যবহারের এক পর্যায়ে এর ‘নন স্টিকি’ আস্তর ক্ষয়ে
যায় এবং খাবার পাত্রে লেগে যেতে শুরু করে।
তবে কার্বন স্টিলের পাত্রের সেই সমস্যা
নেই। প্রথম ব্যবহারের আগে একে ভালোভাবে তেল খাওয়ালেই কাজ শেষ। যে কোনো সাধারণ ‘নন স্টিকি’
পাত্রের তুলনায় কার্বন স্টিলের পাত্রের তেল দিয়ে তৈরি করা ‘নন স্টিকি’ গুণ অক্ষুণ্ন
থাকবে বছরের পর বছর।
দামে সাশ্রয়ী:
ঢালাই লোহার তৈরি হাড়ি পাতিলের সঙ্গে এর দামে তফাৎটা তুচ্ছ মনে হতে পারে। তবে ‘স্টেইনলেস
স্টিল’ কিংবা ‘নন স্টিকি’ পাত্রের তুলনায় ‘কার্বন স্টিল’য়ের পাত্র অনেক সাশ্রয়ী।
মনে রাখতে হবে
‘কার্বন স্টিল’য়ের তৈরি পাত্র সাবান পানি
দিয়ে ধোয়ার পরপরই কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে নিতে হবে। অথবা ধোয়ার পর আবার চুলায় গরম করে
পানি শুকিয়ে ফেলতে হবে। না হলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের পাত্রে রান্নার
পর ধোয়ার পরিবর্তে ভালো মতো মুছে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি পাত্রের ভেতর হালকা
তেলের প্রলেপ যেন থাকে, যা এসব পাত্রের স্থায়ীত্ব বাড়ায়।
আরও পড়ুন