ক্যাটাগরি

মিত্র বাহিনীর শহীদ স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ: সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনেই ভিত্তি স্থাপনের পরিকল্পনা

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল
হক বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেন যৌথভাবে এ ভিত্তিফলক
উন্মোচন করতে পারেন, সেই চেষ্টাই তারা করছেন। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৭
মার্চ থেকে ২৬ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে দশ দিনব্যাপী
অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও
সেই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের একটা প্রকল্প
আছে,
বাংলাদেশের মিত্র বাহিনীর যে সদস্যরা এ দেশে জীবন দিয়েছেন, তাদের স্মরণে একটা
স্মৃতিস্তম্ভ করা। এই প্রকল্প ইতোমধ্যে পাস হয়ে গেছে।

“সেটা হতে পারে যে স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর
স্থাপনের জন্য আমরা যৌথভাবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে
আহ্বান জানাতে পারি। এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে সম্ভাবনা আছে।”

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
হাতে আটক হওয়ার ঠিক আগে আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান। এরপর শুরু হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় সশস্ত্র
বাহিনী এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর
কাছে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ওই যুদ্ধে ১ হাজার ১৬১ ভারতীয় সেনা শহীদ হয়েছিলেন।

এর মধ্যে ৯ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
আশুগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে মিত্র বাহিনীর তিন শতাধিক সেনা শহীদ হন। সে
কারণে দিনটি পালিত হয় ‘আশুগঞ্জ ট্র্যাজেডি’ দিবস
হিসেবে।

মিত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মরণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে
ঢাকা-সিলেট
মহাসড়কের পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালেই
একনেকে ১৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়। কিন্তু
জমি পেতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়। জমি পাওয়ার পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে
মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্প সংশোধন করা হয়।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী
লীগ সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা
জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে
সম্মাননা জানানো হয়। পরে সম্মাননা দেওয়া
হয় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপায়ী এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি
প্রণব মুখার্জিকে।

এরপর ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারত সফর করে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর
সাত যোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল
হক বলেন,
“ভারতীয় সেনাবাহিনীর যারা এদেশে জীবন দিয়েছেন মিত্র বাহিনীর সদস্য হিসেবে, ইতোমধ্যে তাদের সম্মাননায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কয়েক বছর আগে
ভারত সফর করে নিজ হাতে টোকেন হিসেবে কিছু দিয়েছেন। বাকিগুলো আর দেওয়া যায়নি। এরপর করোনাভাইরাসের
কারণে এক বছর ধরে এসব সম্মাননা আমাদের কাছে জমা পড়ে আছে।

“আমাদের মিশনের মাধ্যমে সেগুলো দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ
ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা আছে। বৈশ্বিক অবস্থা ঠিক হলে সেগুলো দেওয়া হবে। করোনাভাইরাসের
এই পরিস্থিতিতে ভারতও সেগুলো এখন নিতে আগ্রহী না। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে সেগুলো
এখন নেওয়া সম্ভব না। পরিবেশ যখন অনুকূলে আসবে, তখন সেগুলো পৌঁছে
দেওয়া হবে।”