গত ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে
জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পায় বাংলাদেশ। পরদিন সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীকে সেই
সুখবর জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের এই সাফল্যের প্রসঙ্গ টেনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের নিবন্ধে বলা
হয়েছে, গত এক দশকে প্রতিবেশী ভারত ও
পাকিস্তানের তুলনায় রপ্তানি আয়ে অভাবনীয় উল্লম্ফন দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
বিকাশমান তৈরি পোশাক শিল্প খাতের ওপর ভর করে এই সময় বাংলাদেশের রপ্তানি আয়
ডলারের হিসাবে ৮০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের রপ্তানি
কমেছে।
‘বাংলাদেশ ইজ বিকামিং সাউথ এশিয়াস ইকোনমিক বুল কেইস’
শিরোনামে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের হংকং-ভিত্তিক আর্থিক বাজার
বিশ্লেষক মাইক বার্ডের লেখা ওই নিবন্ধে বাংলাদেশের এই
অগ্রযাত্রাকে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের
সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
বার্ড লিখেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের
এই সাফল্যের মডেলের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এসব উদীয়মান অর্থনীতির সাফল্যের
বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে মিল রয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশের সুপারিশ অর্জনের পেছনে এদেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী, মজুরির ক্ষেত্রে ধারাবাহিক প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এবং
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় নারী-শ্রমগোষ্ঠীর দৃঢ় ও বর্ধনশীল অবস্থানকে
তুলে ধরা হয়েছে ওই নিবন্ধে।
তবে ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ার তুলানায় বাংলাদেশ যে এখনও যথেষ্ট পিছিয়ে, সে তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়, গত এক দশকে
বাংলাদেশের তুলনায় এ দুই দেশ রপ্তানি থেকে যথাক্রমে তিনগুণ ও দ্বিগুণ আয় করেছে।
এছাড়া তৈরি পোশাক শিল্প খাতের ওপর অতিনির্ভরতা এবং হার্ভার্ডের করা ‘ইকনোমিক
কমপ্লেক্সিটি’ সূচকে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার বিষয়টিও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ
হিসেবে দেখানো হয়েছে নিবন্ধে।
তবে এসব ছাপিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার সাফল্য বাংলাদেশের জন্য
ভবিষ্যতে আরও সাফল্য অর্জনের ইঙ্গিত বহন করছে বলেই মন্তব্য করেছে ওয়াল স্ট্রিট
জার্নাল।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, কোন দেশ পরপর দুটি
ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে
উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মত মানদণ্ডগুলো অর্জন করেছে।
১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে
সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে।
সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি
পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে।
উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার।
মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন; বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৩।
বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ
পেয়েছে, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে জাতি।