রায়ে বলা হয়েছে,
শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
‘মো. আনিস মিয়া
বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় হাই কোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ থেকে এ রায় এসেছে।
এ বেঞ্চে ছিলেন
বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দস ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন।
বিচারপতি শওকত হোসেন এরই মধ্যে অবসরে গেছেন।
২০১৯ সালের ২৮
আগস্ট এ রায় ঘোষণার পর সম্প্রতি ৬৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়েছে।
একটি হত্যা মামলায়
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও ১৯৭৪ সালের শিশু আইনে ২০১১ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার
ট্রাইব্যুনাল-৪ এবং শিশু আদালতের রায়ে এক শিশুকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়। অন্য কয়েকজন
আসামিকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড।
পরে ১০ ববছরের
সাজার বিরুদ্ধে শিশুটির পক্ষে হাই কোর্ট আপিল করা হয়।
এদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রপ্তদের
ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশের অনুমোদনের আবেদন) ও শিশুটির আপিল হাই কোর্টের একটি
দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
শুনানিতে ধরা
পড়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া শিশুটির স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির
১৬৪ ধারায়।
তখন এই স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দি গ্রহণের যৌক্তিকতা এবং শিশু আদালতের এখতিয়ারসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনগত
বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির
কাছে পাঠানো হয়।
২০১৮ সালের ২
অক্টোবর প্রধান বিচারপতি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন। তিন সদস্যের বেঞ্চের রায়ে আনিসের
সাজা বাতিল করা হয়।
আদালতে মো. আনিস
মিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এস এম শাহজাহান ও মো. আবু হানিফ।
এ মামলায় অ্যামিচি
কিউরি হিসেবে আদালতে মতামত দিয়েছেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এম আই ফারুকী ও শাহদীন
মালিক।
রায়ে বলা হয়েছে,
শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ কিশোর বিচার ব্যবস্থার ধারণার পরিপন্থি। নিউরোসায়েন্স
এবং মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা অনুযায়ী শিশুরা তাদের কর্মকাণ্ডের পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ
সচেতন নয়। শিশুরা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বস্তুত, মস্তিস্কের যে অংশটি
আবেগ ও যৌক্তিকতা নিয়ন্ত্রণ করে, শিশু অবস্থায় মস্তিস্কের সে অংশ পরিপক্ক হয় না।
শিশুরা স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দির পরিণতি সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখে না বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়ভ
এতে বলা হয়, কিশোরের
বিচার (জুভেনাইল জাস্টিস) ব্যবস্থায় কোনো শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সাক্ষ্যমূল্য
নেই। আর এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিকে সাজা দেওয়ার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে
না।
রায়ে বলা হয়েছে,
স্পর্শকাতর মামলায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংঘাতে জড়ানো শিশুর মা-বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া
হয়। এরপর এনিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তার আর মানসিক ভারসাম্য থাকে না। একারণে
অনেক ক্ষেত্রে তারা অপরাধের দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নেয়।
আবার কিছু কিছু
ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়ার প্রলোভনে শিশু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়ে যায়
বলেও রায়ে বলা হয়।