অস্বাস্থ্যকর ওজন গোটা মানবজাতির সাধারণ সমস্যা। শরীরের বিভিন্ন অংশে অস্বাভাবিক মাত্রায় চর্বি জমার কারণে একজন মানুষ নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে একদিকে হীনমন্যতায় ভোগেন অপরদিকে সেই স্থূলতা ডেকে নানান দূরারোগ্য ব্যাধি, যা ডেকে আনতে পারে অকাল মৃত্যুও।
স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের গুরগাও’য়ের ‘মেডান্টা-দ্য মেডসিটি হসপিটাল’য়ের ‘গ্যাস্ট্রো সার্জারি’ বিভাগের ‘জিআই অ্যান্ড ব্যারিয়াটিক সার্জন’ ডা. ভিকাস সিংহালের পরামর্শ অনুসারে জানানো হল স্থূলতার হুমকি এবং তা সামাল দেওয়ার উপায়।
স্থূলতার ধরন
‘মেল প্যাটার্ন’ ও ‘ফিমেল প্যাটার্ন’ এই দুই ভাগে স্থূলতা বা ‘ওবেসিটি’কে ভাগ করেন ডা. সিংহাল। এদের মধ্যে ‘মেল প্যাটার্ন’ তুলনামূলক বেশি ক্ষতিকর। কারণ এতে চর্বি জমা হয় কোমরের চারপাশে। পেটে জমা হওয়া চর্বিকে বলা হয় ‘ভিসেরাল ফ্যাট’ যা ঝরানো অত্যন্ত কঠিন। এই চর্বি কোষের গভীরে গিয়ে জমা হয় এবং বিভিন্ন দূরারোগ্য ব্যধির মূল কারণ ওই চর্বি।
‘ফিমেল প্যাটার্ন’ স্থূলতার ক্ষেত্রে চর্বি শুধু কোমরেই নয়, পাশাপাশি উরু ও নিতম্ব অঞ্চলেও জমে। বিপাক ক্রিয়ার সমস্যা তৈরি করে না বলে এই চর্বির ক্ষতির মাত্রা কম।
স্থূলতার ঝুঁকি
শুধু অতিরিক্ত খাওয়া কিংবা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাই যে স্থূলতার কারণ তা কিন্তু নয়।
ডা. সিংহাল বলেন “স্থূলতা এক ধরনের রোগ আর একে সেভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। শুধু অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হয়ত ওজন বাড়াতে পারে তবে ‘ওবেসিটি’ বা স্থূলতা তৈরি করতে পারবে না।”
“খাবারের মাধ্যমে কর্মশক্তি গ্রহণ আর তার ব্যবহারের ভারসাম্য অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। আর ‘ওবেসিটি’র পেছনে ভূমিকা রাখে বংশগত প্রভাব, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মানসিক সমস্যা ইত্যাদি।”
স্থূলতার পরিমাপ
ওজন মাপার যন্ত্রে ওজন বেশি দেখলেই নিজেকে স্থূলতায় আক্রান্ত মনে করলে ভুল হবে। বরং দেখতে হবে ‘বডি ম্যাস ইনডেক্স (বিএমআই)’।
‘বিএমআই’ হল উচ্চতা এবং ওজনের অনুপাত। যার আদর্শমান বয়স ও গোষ্ঠীভেদে ভিন্ন।
শিশুদের ‘ওবেসিটি’ পরিমাপেও ‘বিএমআই’ ব্যবহার করা হয়। তবে সেই পদ্ধতি প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় জটিল।
স্থূলতার কারণ
অনেকগুলো কারণের মিশ্র প্রভাবে স্থূলতা দেখা দেয়। তবে খাদ্যাভ্যাসের প্রভাবটাই প্রকট। বিশ্বব্যাপি ৭০ শতাংশ ‘ওবেসিটি’র সরাসরি কারণ হল অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
আর খাদ্যাভ্যাস যদি অস্বাস্থ্যকর হলে যতই শরীরচর্চা করা হোক না কেনো উপকার পাওয়া যাবে না।
আর এই মূল প্রভাবকের সঙ্গে হরমোনজনীত সমস্যা, ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আর অলস জীবনযাত্রা যুক্ত হয়ে ঠেলে দেয় স্থূলতার দিকে।
সামলানোর উপায়
ডা. সিংহাল বলেন, “প্রথম ধাপ হল স্থূলতার কারণ খুঁজে বের করা এবং তা সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া। ওষুধের পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা ইত্যাদিসহ আর বিভিন্ন পদক্ষেপ থেকে বেছে নিতে হবে আদর্শ পদক্ষেপটি।”
“এরপরও যদি কাজ না হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অস্ত্রোপচারের ভাবনায় যাওয়া যেতে পারে।”
যাদের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে ১৫ থেকে ১৬ কেজি বেশি তাদের জন্য খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ আর শরীরচর্চাই যথেষ্ট। এর বেশি যাদের ওজন তাদের ওষুধ সেবন করতে হতে পারে। স্বাভাবিকের চাইতে যাদের ওজন ৯০ কেজি বেশি তাদের প্রয়োজন হবে ‘এন্ডোস্কোপিক সার্জারি’ আর ১০০ কেজি বেশি হলে ভাবতে হবে ‘ব্যারিয়াটিক সার্জারি’ নিয়ে।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন
স্বাস্থ্যকর খাবার যখন স্থূলতার কারণ