জেলার
মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২ হাজার ৩শ’
ভোটারের সবাই থাকেন এই বাড়িতে। নারায়ণপুর বাজার থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি
দিয়ে এ বাড়িতে আসতে ৩০ মিনিট সময় লাগে।
এ
বাড়িতে বাইরের কেউ ঢুকলে সহজে বেরুতে পারবে না। রাস্তা ভুলে যাবে। বাসিন্দারা
বলছেন, বাড়িতে রাস্তা চেনার একটাই উপায়, তাহলো সিমেন্ট ঢালাই করা সরু রাস্তা।
দালাল
বাড়ির চারদিক ঘিরে রয়েছে ফসলি জমি। কাছাকাছি নেই অন্য কোনো বাড়ি।
এ
বাড়িতে খাবার পানির জন্য রয়েছে প্রায় ৬০টি চিউবওয়েল। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং
আটটি মন্দির।
নায়েরগাঁও
দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মৃধা বলেন, “মেহারন দালাল বাড়ি এ
এলাকার অনেক পুরনো ঐতিহ্যবাহী বাড়ি। অনেক পরিবারের বসবাস এখানে।”
বাড়িটির
বাসিন্দা মেহারন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম দাস বলেন, “কয়েক
পুরুষ ধরে আমরা এ বাড়িতে বসবাস করছি। আমাদের মাঝে কোনো ঝগড়া-বিবাদ নেই। আনন্দ-উৎসব
আমরা একসাথে পালন করি।”
বাড়ির
ঘরগুলোর কোনোটির মূল দরজার সামনেই আরেক ঘরের দরজা। বেশিরভাগ ঘর টিনের। বাড়িতে নেই
কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বাড়ির আঙ্গিনায় সরু রাস্তাগুলো বৃষ্টিতে কাদায় সয়লাব হয়ে
যায়। বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয়
বাসিন্দা ব্যবসায়ী উত্তম কুমার বলেন, ছোট একটি বাড়িতে হাজার হাজার মানুষের বসবাস।
এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই নাজুক। বর্ষার সময় পুরো বাড়ি কাদা হয়ে থাকে। তখন
চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়ে পড়ে।
শিক্ষার্থী
বাধন চন্দ্র দাস জানায়, এখানে একটি উচ্চ বিদ্যালয় খুব জরুরি। এখানকার
শিক্ষার্থীদের অনেক দূরে গিয়ে লেখাপড়া করতে হয়।
মেহারন
দালাল বাড়ির ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে সাবেক জমিদারদের দো’তলা দুইটি ভবন, কালের সাক্ষী
হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটির নাম
দ্বারকাপুরি এবং অপরটি আম্বিকা ভবন। প্রথম ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে এবং পরেরটি ১৩৪৪ সনে।
এক সময় জমিদার পরিবারের লোকজনের বাস দিয়ে শুরু এ দালাল বাড়ির। দো’তলা দু’টি
ভবনতে এখনো জমিদারের বংশধররা বসবাস করেন। তবে এখানে বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষ জেলে,
কৃষক ও ব্যবসায়ী।
আগেকার
এই জমিদার পরিবারের বংশধর উত্তম কুমার দাস বলেন, আমাদের বংশের পূর্ব্সূরিরা এখানে
অনেক জমি দান করেছেন। এখানে একটি স্কুলও নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি
পরিত্যক্ত ভবনে রয়েছে।
“নতুন
একটি বিদ্যালয় নির্মাণ হলেও ভবনে জায়গা ছোট হওয়ায় ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে
না।”
পরিবারের
আয়তন অনুসারে বাড়িটির জায়গা খুবই কম জানিয়ে তিনি বলেন, এ কারণে দোকানগুলো সব বাড়ির
মধ্যেই।
এ
বাড়ির বাসিন্দারের জন্য জরুরিভাবে রাস্তা এবং স্বাস্থ্য ক্লিনিক করা দরকার বলে মনে
করেন উত্তম কুমার ।
দালাল বাড়ির বাসিন্দা একারশি ও পার্বতী জানান, এ বাড়ির নারীদের খুব কষ্ট
করে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। গর্ভাবস্থায় বেশি দুশ্চিন্তা থাকে। রাস্তা খারাপ থাকায়
কোনো গাড়ি ভেতরে আসতে চায় না। কাছাকাছি কোনো স্বাস্থ্য ক্লিনিকও নেই।
পুরো
বাড়িটি ঘিরে ১টি স্বর্ণের দোকান, ৪টি সেলুন, ২টি ফার্নিচারের দোকান, ২টি মোবাইল
সার্ভেসিং, ৪টি মুদি দোকান রয়েছে।
মেহারন
দালাল বাড়িতে একটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, বাজারসহ দোকানপাট
রয়েছে।
২২ বছর
ধরে এ বাড়ির ভোটে নির্বাচিত নায়েরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার উত্তম কুমার দাস
বলেন, ভোটের সময় বাড়ির লোকজন যার ব্যাপারে মতামত দেন, সবাই মিলে তাকেই মেম্বার
নির্বাচিত কর হয়।
“বাড়িতে
কোনো বিচার-সালিশ করতে হয় না, সবাই মিলেমিশে থাকি। আমাকে কোথাও ভোট খুঁজতে যেতে হয়
না।”
বাড়ির
লোকজন নিম্ন আয়ের মানুষ হওয়ায়, সরকারি সব সহায়তা সবার মাঝে বিলি করা হয় বলেন তিনি।
চাঁদপুরের
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, মেহারন দালাল বাড়িটির বিষয়ে আমরা খবর নিচ্ছি।
সেখানে যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়, তা করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।