সোমবার রাঙামাটিতে এক অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা বলেন, “অনেক আশা-ভরসা নিয়ে আমরা ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি করেছিলাম; কিন্তু গত ২৩ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়নের গতি দেখে আমরা হতাশ। চুক্তির পর জুম্ম জনগণের জীবনমান উন্নয়নের অনেক আশা থাকলেও বর্তমানে আমরা অস্তিত্ব সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”
পাহাড়ি নারীদের রাজনৈতিক সংগঠন ‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন’ এর ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
রাঙামাটি জেলা শহরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এই আলোচনায় তিনি পাহাড়ের নারীদের নারী অধিকার রক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানান।
১৯৯৭ সারের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরাম্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব স্ব অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি’ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
সন্তু লারমা দীর্ঘদিন ধরে এই চুক্তির ‘যথাযথ’ বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়ে আসছেন।
আলোচনায় সন্তু লারমা বলেন, আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হবে দেশে। এই ৫০ বছরে অস্তিত্ব হারাতে হারাতে আজ আমরা সর্বশ্বান্ত। চুক্তি ‘যথাযথ বাস্তবায়ন না’ হওয়ায় হতাশা আরও বাড়ছে। আমরা এখন তাকিয়ে আছি কবে কীভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। আমরা অপেক্ষায় আছি কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।”
“চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে শুধু জুম্ম নারী ও পুরুষ সকল ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে,” অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলে এক ধরনের শাসন ব্যবস্থা চলছে, যার দ্বারা এখানকার জুম্ম নারীরা শোষণের স্বীকার হচ্ছে।”
‘করোনাকালে সমভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠায় নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন জোরদার করি’ এই শ্লোগানে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সন্তু লারমা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি রাঙামাটি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রিতা চাকমার সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবি ট্রাস্টি সুষ্মিতা চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত উপ-সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙামাটি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নান্টু ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিকা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি রিনা চাকমা।