প্রকৃত আসামিকে শনাক্ত
করার পাশাপাশি তার পরিবর্তে অন্য কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়া
হয়েছে কি না, তদন্তে তাও বের করতে বলা হয়েছে।
শরীয়তপুরের মুখ্য
মহানগর হাকিম বা তার তত্ত্বাবধানে যে কোনো হাকিম (ম্যাজিস্ট্রেট) বিষয়টি তদন্ত
করবেন। তদন্তে সিরাজগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ ও জেল সুপারকে সহযোগিতা করতে
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদেশ পাওয়ার ৩০
দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন
দিতে বলেছে আদালত।
মানিক মিয়ার
পরিবর্তে মানিক হাওলাদারের গ্রেপ্তার এবং তার আটকাদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনের
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেয় বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি
মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
প্রকৃত আসামিকে চিহ্নিত
বা শনাক্ত না করে মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার এবং তাকে কারাগারে নেওয়া কেন অবৈধ ও আইনগত
কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
চার সপ্তাহের মধ্যে
স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সিরাজগঞ্জ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১
এর বিচারক শরীয়তপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম, সিরাজগঞ্জ ও শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক,
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক, শরীয়তপুর থানার ওসিসহ বিবাদীদের রুলের
জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী পার্থ সারথী রায়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি
অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
পার্থ রায়
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকৃত আসামি মানিক মিয়া না কি মানিক হাওলাদার, তা চিহ্নিত
বা শনাক্ত করতে আদালত বিষয়টি বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।”
৩০ দিনের মধ্যে
তদন্ত শেষ করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলে
আদালত আগামী ১২ এপ্রিল মামলাটি পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছে বলে জানান তিনি।
এ আইনজীবী বলেন,
দুইজনের নামই মানিক। একজনের নাম মানিক মিয়া, আরেকজনের নাম মানিক হাওলাদার। দুজনের
বাড়িই শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুর ইউনিয়নে। তবে মানিক মিয়ার গ্রামের নাম
ব্যাপারীকান্দি, অন্যজনের গ্রামের বাড়ি আলমচান ব্যাপারীকান্দি।
মানিক
হাওলাদারের বাবার নাম নজরুল ইসলাম, আর মানিক মিয়ার বাবা ইব্রাহীম মৃধা। তবে মামলার
নথিপত্রে মানিক মিয়ার বাবার নাম নজরুল হাওলাদার উল্লেখ আছে বলে জানান পার্থ রায়।
২০০৯ সালে
গাড়িতে ৬৬৮ বোতল ফেনসিডিল পাওয়ার অভিযোগে ওই বছর ২ জুন সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায়
চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওই মামলার আসামি হিসেবে মানিক মিয়াকে ২০০৯ সালের ৩
জুন গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার নথির
তথ্য অনুযায়ী, কিছু দিন পর ওই বছরই হাই কোর্ট থেকে জামিন পান মানিক। এরপর থেকে তিনি
পলাতক।
২০১৯ সালের ১১
ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ আদালত চার আসামিকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন। আসামিরা হলেন-
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার মন্টু শেখ ওরফে জামাল উদ্দিন ও সোহরাব হোসেন, পটুয়াখালী
বাউফল থানার জামাল হোসেন ও শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার মানিক মিয়া।
এরপর সিরাজগঞ্জের
বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মাদক মামলার চার বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মানিক
মিয়া, পিতা নজরুল হাওলাদার, গ্রাম ব্যাপারী কান্দির নামে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর সখীপুর থানায় আসে।
পরোয়ানা পেয়ে সখীপুর
থানার পুলিশ গত বছর ২৮ নভেম্বর ওই থানার আলম চান ব্যাপারী কান্দি গ্রামের মৃত
নজরুল ইসলামের ছেলে মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা
কারাগারে আছেন।
এদিকে মানিক
হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের পর তার পরিবার গত বছর ৩০ নভেম্বর শরীয়তপুরের বিচারিক হাকিম
আদালতে জামিনের আবেদন করে।
ওই জামিন আবেদনে
মানিক হাওলাদার যে প্রকৃত আসামি নন, তার সপক্ষে কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়।
তখন আদালত
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা সহকারী উপপরিদর্শক শামসুর রহমানকে লিখিত ব্যাখ্যা
উপস্থাপন করার নির্দেশ দেয়।
এরপর গত বছরের ৯
ডিসেম্বর শামসুর রহমান আদালতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যায় বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার
আসামির নামের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় এবং এই নামে অন্য কোনো ব্যক্তি না থাকায় তিনি মানিক
হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছেন।
পরে মানিক
হাওলাদারের মুক্তি চেয়ে তার স্ত্রী সালমা বেগম ২ মার্চ হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
আরও খবর
নামের মিলে ‘ভুল লোক’ গ্রেপ্তার, দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ হাই কোর্টের
বিনা দোষে বন্দি: আরমানকে এখনই মুক্তি ও ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
বিনা দোষে কারাভোগ: আরমানকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের হাই কোর্টের রায় স্থগিত