ক্যাটাগরি

তিক্ত শৈশব ভোলার আকুতি তাসনুভাকে দিয়েছে রূপান্তরের শক্তি

তবে কারও কারও কাছে সেই শৈশবস্মৃতি এক বিভীষিকার নাম। কখনোই তারা ফিরে যেতে চান না তিক্ত শৈশবের স্মৃতিতে। রূপান্তরিত নারী (ট্রান্সজেন্ডার) তাসনুভা আনান শিশির এমনই একজন, শৈশবে যার নাম ছিল কামাল হোসেন।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন তাসনুভা। এরপর থেকেই তাকে নিয়ে গণমাধ্যম, সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করতে পেরে তাসনুভাও উচ্ছ্বসিত। কষ্টের শৈশবের সেই বিভীষিকাময় স্মৃতিতে কখনোই ফিরে যেতে চান না তিনি। আর সেই আকুতিই তাকে জীবন বদলে ফেলার শক্তি যুগিয়েছে।

তাসনুভা বলেন, “আমার শৈশব ছিল অপমানের, বুলিংয়ের। পদে পদে ট্রলের শিকার হয়েছি, দিনরাত গালিগালাজ শুনেছি। সেটা শুরু হয়েছিল পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই।

“মানুষ জীবনে ভালো বন্ধু পায়, আর আমি পেয়েছি গালি। হিজড়া, ছক্কা, হাফ লেডিস এরকম বিবিধ গালি আমার শৈশব কৈশোরের সঙ্গী হয়ে ছিল। এক সময় আমি আমার নিজের নামটাই ভুলে যেতাম।”

তাসনুভার জানান, তার ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা তখন থেকেই। পারিপার্শ্বিক নানা বাস্তবতার কারণে একসময় পরিবারও ছেড়ে আসেন তিনি। একটু একটু করে তৈরি করেন নিজেকে।

পড়াশোনার খরচ যোগাতে বিভিন্ন রকম চাকরি করতে হয়েছে। সেসব চাকরিতেও সহ্য করতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতা। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও তিনি অংশ নিয়ে গেছেন।

“যখন পড়াশোনা শেষ করে পুরোপুরি চাকরিতে ঢুকলাম, ভেবেছিলাম আর হয বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু তখন দেখলাম পুরোপুরি ভিন্ন এক চিত্র। নিজের সেরাটা দেওয়ার পরেও আমাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হত না।”

কীভাবে সংবাদ উপস্থাপনায় এলেন, জানালেন সেই কথাও।

“অন্য সবার মতই এখানে ইন্টারভিউ দিলাম, এরপর ভাইবা ফেইস করলাম, প্রত্যেকটা টেকনিক্যাল পার্ট ফেইস করলাম। যদিও নিউজের জন্য আলাদা কোনো কোর্স করিনি, তাই নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভাবতেও পারিনি এখানে সংবাদ পড়ার সুযোগ পাব।”

গণমাধ্যমে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে তার যাত্রা তাদের মতো মানুষগুলোর প্রতি সামাজিক দৃষ্টি পরিবর্তনে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তাসনুভা আনান।

সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বৈশাখী টেলিভিশনের পর্দায় প্রথমবার সংবাদ উপস্থাপনা করতে দেখা যাবে তাসনুভাকে।

পাশাপাশি আরেকজন রূপান্তরিত নারী নুসরাত জাহান মৌকে দেখা যাবে ‘চাপাবাজ’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটেকের মূল নারী চরিত্রে; এ পর্বটিও নারী দিবসে প্রথম প্রচারিত হবে বৈশাখী টেলিভিশনে।