পেটির বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর অভিযোগ ছিল, তিনি ক্লাসে নবী মোহাম্মদ (সা:) এর ব্যাঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন এবং এজন্য তিনি মুসলমান শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
যার জেরে চেচেন বংশোদ্ভূত ১৮ বছরের তরুণ আব্দুল্লাহ আনজোরোভ স্কুলের কাছের একটি সড়কে দিনের বেলা পেটিকে গলা কেটে হত্যা করে। পরে পুলিশের গুলিতে আনজোরোভ নিহত হয়।
ইতিহাস ও ভূগোলের শিক্ষক পেটি হত্যার ঘটনা পুরো ফ্রান্সকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিন্দার ঝড় উঠেছিল।
যে ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে পেটির বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রচারণা শুরু হয়েছিল এখন সেই ছাত্রী বলছেন, পেটি যেদিন ক্লাসে নবীর ব্যাঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে সেদিন ওই ছাত্রী আসলে ক্লাসেই উপস্থিতি ছিলেন না।
১৩ বছরের ওই ছাত্রীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। ওই ছাত্রী আসলে তার বাবাকে বলেছিল, শিক্ষক পেটি বাক স্বাধীনতা এবং ধর্মঅবমাননা নিয়ে পড়ানোর সময় নবী মোহাম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন। তিনি ওই সময় মুসলমান শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলেন।
পরে ফরাসী সংবাদামাধ্যমগুলোকে ওই ছাত্রী বলেন, ‘‘আমি ওই ব্যাঙ্গচিত্রগুলো দেখিনি। আমার ক্লাসের অন্য এক ছাত্রী পরে সেগুলো আমাকে দেখায়।
তবে কেন তিনি মিথ্যা বলেছিলেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জাবাবে তার আইনজীবী বলেন, ‘‘সে মিথ্যা বলেছিল কারণ তার সহপাঠীরা তাকে তাদের মুখপাত্র হতে বলেছিল এবং সে এমনভাবে আটকে গিয়েছিল যে তাদের অনুরোধ ফেলতে পারেনি।”
বিবিসি জানায়, মেয়ের মুখে ক্লাসের ঘটনা জানতে পেরে ওই ছাত্রীর বাবা শিক্ষক পেটির বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেটির বিরুদ্ধে প্রচারণাও চাছিলেন।
পেটি খুন হওয়ার পর ওই প্রচারণার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে।
অথচ, পেটি আগের বছরও একই ক্লাস নেওয়ার সময় একই ব্যাঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন এবং মুসলমান শিক্ষার্থীদের চোখ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন।
অথচ ওই ছাত্রী বলেছিলেন, পেটি মুসলমান শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
স্থানীয় একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়, ঘটনার দিন ওই ছাত্রীকে পেটির ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। কারণ, তিনি নিয়মিত ক্লাস ফাঁকি দিতেন।
কেন তিনি মিথ্যা বলেছিলেন তার ব্যাখ্যায় ওই ছাত্রী পরে বলেন, ক্লাস থেকে বরখাস্ত হওয়ার কথা জানতে পারলে তার বাবা দুঃখ পাবেন। এজন্য তিনি ক্লাস না করতে পারার কারণ নিয়ে মিথ্যা গল্প বানিয়েছিলেন।
স্থানীয় একটি রেডিওতে মঙ্গলবার পেটির পরিবারের আইনজীবী বলেন, ওই ছাত্রীর পরিবার জানতো তাদের মেয়ে ঘটনার দিন ক্লাসে উপস্থিত ছিল না এবং কেন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
‘‘তাই এখন সামনে এসে দুঃখ প্রকাশ করা এবং বলা, ‘আমি আমার মেয়ের মিথ্যা কথা বিশ্বাস করেছিলাম’, আসলেই কোনো অর্থ বহন করে না।”
এর আগে বিতর্কিত কার্টুন ছাপার জেরে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি প্যারিসে শার্লি এবদু কার্যালয়ে ঢুকে গুলি চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা করে উগ্রপন্থি মুসলিম দুই ভাই। মারা গিয়েছিল ফ্রান্সের বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট-সহ ১২ জন।
পেটি খুন হওয়ার আগের মাসে একই ঘটনার জেরে শার্লি এবদুর পুরনো কার্যালয়ের কাছে দুই সাংবাদিক ছুরিকাহত হয়েছিলেন।