ক্যাটাগরি

কারাগারে থেকে যেভাবে পালিয়েছিলেন রুবেল

মঙ্গলবার
এই যুবককে গ্রেপ্তারের পর তার জেল পালানোর এই বিবরণই দিয়েছে চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা।

তারা
বলছেন, খুনের মামলায় ‘মৃত্যুদণ্ড’ হতে পারে ভেবে তা এড়াতে দুঃসাহসী এই কাজ করেছেন রুবেল।

নরসিংদী
থেকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবারই চট্টগ্রামে আনা হয় রুবেলকে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে
পাঠানো হয় কারাগারে।

তার
আগে রুবেলকে পায়ে ব্যান্ডেজ লাগানো অবস্থায় দেখা গিয়েছিল কোতোয়ালি থানায়। এসময় তার
চোখ-মুখ ছিল ফোলা, দেহে ক্ষত চিহ্নও ছিল।

পুলিশ
কর্মকর্তারা বলছেন, পালাতে গিয়েই আঘাত পেয়েছিলেন রুবেল। সেজন্য গ্রেপ্তারের পর তাকে
হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাও দেওয়া হয়।

রুবেলের
(২০) বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের মীরেরকান্দি গ্রামে।

গত
৬ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামে এক ব্যক্তিকে বুকে ছুরি চালিয়ে হত্যার মামলায় ডবলমুরিং
থানার মিস্ত্রি পাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম সদরঘাট থানা পুলিশ।

গত
৯ ফেব্রুয়ারি থেকে রুবেল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। গত ৬ মার্চ সকাল থেকে
তাকে খুঁজে না পাওয়ার কথা জানিয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করে কারা কর্তৃপক্ষ।

এই
ঘটনায় গঠিত কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির প্রধান কারা উপ-মহাপরিদর্শক ছগীর মিয়া এর
আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের
মনে হয়েছে, কারাগারের দেয়াল টপকে পালিয়েছিলেন রুবেল।

পুনরায়
গ্রেপ্তারের পর রুবেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত
উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেয়ালই টপকেছিলেন
রুবেল।

পালানোর
বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভোর সোয়া ৫টায় সেলের তালা খোলার পর রুবেল কারাগারে কর্ণফুলী
ভবনের নিচে নেমেছিলেন। সেখান থেকে যান প্রায় ১৫০ গজ দূরে সংস্কারাধীন ৩২ নম্বর সেল
ভবনের কাছে। ওই ভবনটি দুই তলা থেকে পাঁচ তলা করা হচ্ছে।

“৩২
নম্বর সেল ভবনের দরজা বন্ধ থাকায় সে জানালার গ্রিল দিয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠে। সেখান থেকে
সিঁড়ি বেয়ে চারতলার ছাদে উঠে। সেখান থেকে লাফিয়ে নিরাপত্তা প্রাচীর পার হয়। যে প্রাচীরটি
১৮ ফুট উচুঁ এবং ভবন থেকে ২২ ফুট দূরে। সীমানা প্রাচীর পার হয়ে সে কারাগারের বাইরে
যায়।”

এই
বর্ণনা দিয়ে এডিসি পলাশ বলেন, “সিসি ক্যামেরার ফুটেজ না দেখলে কোনোভাবেই বিশ্বাস করা
যেত না রুবেল কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।”

রুবেলের
কারাগার থেকে পালানোর কারণ জানিয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, রুবেলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও আরও কয়েকটি মামলা আছে। ওই সব মামলায়
তিনি আগেও কারাগারে ছিলেন।

“তবে
হত্যা মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে ভেবে রুবেল কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা
করে।”

দেয়াল টপকেও ওই হাজতি পালাতে পারেন বলে সন্দেহ

জেল পালানো রুবেল লুকিয়ে ছিলেন ফুপুর বাড়িতে
 

গত ৬ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে ফরহাদ হোসেন রুবেল

গত ৬ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে ফরহাদ হোসেন রুবেল

পুলিশ
কর্মকর্তারা বলেন, প্রাচীর টপকে রাস্তায় যাওয়ার পর রুবেল যান চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে।
সেখান থেকে সকাল ১০টার ট্রেনে ঢাকা হয়ে নরসিংদী চলে যান।

নরসিংদীর
রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ শেরপুর কান্দাপাড়ায় ফুপুর বাড়িতে উঠেছিলেন রুবেল। সেখান থেকে
নরসিংদী পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম পুলিশ।

রুবেলের
পালানোর ঘটনার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আইয়ুব উদ্দিন জানান, কারাগার থেকে পালানোর
পর পাথরঘাটা এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশায় রেলস্টেশনে গিয়েছিলেন রুবেল।

“ট্রেনযোগে
ঢাকা হয়ে নরসিংদী গিয়ে মীরকান্দির চরে নিজের গ্রামের বাড়িতে প্রথমে উঠেছিল সে। ধরা
পড়ার ভয়ে আদিয়াবাদের দুর্গম চরাঞ্চলে ফুপুর বাড়িতে চলে যায়।”

মঙ্গলবার
চিকিৎসা নেওয়ার জন্য রুবেলের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল বলে স্বজনদের বরাত দিয়ে
জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

রুবেল
পুলিশকে বলেছেন, নরসিংদীতে তার একটি মোটর সাইকেল আছে। চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তা বিক্রি
করে দেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ধরা পড়েন তিনি।

গ্রেপ্তারের
পর চট্টগ্রামে এনে রুবেলকে প্রথমে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে
তাকে চিকিৎসা দিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কোতোয়ালী থানায় আনা হয়।

পরে
আদালতের মাধ্যমে তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যেখান থেকে তিন
দিন আগে পালিয়েছিলেন তিনি।

হাজতি
‘নিখোঁজের’ ঘটনায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার
আবু সাদাতকে প্রত্যাহার এবং দুই কারারক্ষীকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে; তিন সদস্যের
একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

সোমবার
তদন্ত কমিটি কাজ শুরুর প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের দিয়ে কারা অভ্যন্তরে তল্লাশি
চালান। তার একদিন বাদেই রুবেলকে ধরা হল।

পুরনো খবর

চট্টগ্রাম কারাগার থেকে হাজতি ‘নিখোঁজ’
 

হাজতি ‘নিখোঁজ’: সরানো হল চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার ও ডেপুটি জেলারকে
 

চট্টগ্রামে কারাগার থেকে হাজতি ‘নিখোঁজের’ ঘটনায় মামলা
 

দেয়াল টপকেও ওই হাজতি পালাতে পারেন বলে সন্দেহ
 

নিখোঁজ সেই হাজতি কারাগারের ভেতরেই কি না, খুঁজছে ফায়ার সার্ভিস

চট্টগ্রাম কারাগার থেকে পালানো রুবেল ধরা পড়লেন নরসিংদীতে