ক্যাটাগরি

বাংলাদেশে প্রিটোরিয়াসের ‘অদ্ভুতুড়ে’ অভিজ্ঞতা

আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়েন প্রিটোরিয়াস। তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটের শুরু ও এগিয়ে চলা দক্ষিণ আফ্রিকায়। ঘরোয়া ক্রিকেট সেখানে নিয়মিত খেললেও জাতীয় দল, ‘এ’ দলে খেলতে পারেননি কখনোই। ২০১৫ সালে ক্লাব ক্রিকেট খেলতে পাড়ি জমান আয়ারল্যান্ডে, ২০১৮ সাল থেকে থিতু সেখানেই। তার বাগদত্তাও আইরিশ। আগামী বছর অনুমতি পাবেন আইরিশদের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার। এখন চলছে সেটিরই মহড়া।

আইরিশদের ‘এ’ দলের হয়ে বাংলাদেশে এসে চার দিনের ম্যাচে সুযোগ পাননি। একদিনের ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচে জায়গা পান একাদশে। গত মঙ্গলবার ছিল তার জন্মদিন, পূর্ণ করলেন ৩০ বছর। এরপর শুক্রবার তার নতুন দেশের ‘এ’ দলের হয়ে অভিষেক। প্রথম উইকেটের স্বাদও পেয়ে যান বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের ইয়াসির আলি চৌধুরিকে আউট করে। তারপর?

ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডের ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারে প্রিটোরিয়াস শোনালেন পরের ঘটনা।

“সত্যি বলতে, খুবই অদ্ভুতুড়ে কয়েকটি দিন গেল। সবাই কোভিড নেগেটিভ হয়ে প্রথম ম্যাচ শুরু করি আমরা। প্রটোকল অনুযায়ী, নেগেটিভ হয়েই খেলতে হতো। এরপর প্রথম ইনিংসের মাঝামাঝি সময়ে আমাকে মাঠের বাইরে নেওয়া হলো, খেলা বন্ধ হয়ে গেল। যখন বলা হলো আমি কোভিড পজিটিভ, হতবাক হয়ে গেলাম।”

“তখনই দল থেকে আলাদা করা হলো আমাকে। কমলা রঙের একটি স্যুট পরতে বলা হলো। একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে হোটেলে ফিরিয়ে নিয়ে আমাকে আইসোলেশন কক্ষে পাঠানো হলো। সন্ধ্যাটা সেখানেই কাটালাম।”

বিপত্তিটা হয়েছিল সেদিন কোভিড রিপোর্ট দেরিতে আসায়। রিপোর্ট আসার পর দেখা যায়, প্রিটোরিয়াস পজিটিভ। ততক্ষণে ম্যাচ শুরু হয়ে গেছে। ৩০ ওভার শেষে পরিত্যক্ত হয় ম্যাচ। তবে কোনো উপসর্গই ছিল না প্রিটোরিয়াসের। ৪ ওভার বোলিং ততক্ষণে করে ফেলেন তিনি।

শুক্রবার আইসোলেশনে যাওয়া সেই প্রিটোরিয়াস রোববারই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে যান। ইনিংস ওপেন করতে নেমে খেলেন ৯০ রানের ইনিংস। পরে বল হাতে নেন ১টি উইকেট। পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হওয়ার সেই প্রক্রিয়াও শোনালেন তিনি।

“টিম ম্যানেজমেন্ট দারুণভাবে গোটা পরিস্থিতি সামাল দেয়। দুটি পরীক্ষা করানো হয় আমার, জরুরিভিত্তিতে একটি ও দলের সবার সঙ্গে আরেকটি। ভাগ্য ভালো যে দুই পরীক্ষাতেই আমি নেগেটিভ হই। মেডিকেল স্টাফরা বলছিলেন, আগের রিপোর্ট ছিল ‘ফলস পজিটিভ।’ আমি তাই আমার খেলা শুরু করতে পারি।”

প্রিটোরিয়াস জানান, দুই সপ্তাহের ঘরবন্দি জীবনের জন্য তিনি মানসিকভাবে তৈরি হয়ে গিয়েছিলেন।

“সত্যি বলতে, গতকাল (রোববার) আমি খেলব, ভাবতেও পারিনি। উদ্ভট একটা অবস্থায় ছিলাম।  আইসোলেশনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলাম ও খুব বাজে ব্যাপার হলে, ১৪ দিন সেখানে থাকতে হবে বলে ধরেই নিয়েছিলাম। যাই হোক, দুটি নেগেটিভ রিপোর্টের পর চেষ্টা করেছি স্বাভাবিক কার্যক্রমে আবার মনোযোগ দিতে।”

মঙ্গলবার সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেও খেলছেন প্রিটোরিয়াস।

এভাবেই তিনি এগিয়ে চলেছেন স্বপ্ন পূরণের পথে। গতবছর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিশ্বকাপ খেলতে চান তিনি।

“দেশের হয়ে খেলা সবারই স্বপ্ন, ছেলেবেলা থেকেই এই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা। আমার ক্ষেত্রে অবশ্যই আগে আশা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা। কিন্তু সেখানে যেভাবে সবকিছু এগিয়েছে, বিকল্প খুঁজতেই হতো। আমার বাগদত্তা এই দেশের, এখানে চলে আসাটাই ভালো মনে হয়েছে।”

“আয়ারল্যান্ড দারুণ এক দেশ। কাজেই তাদের হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা ও বিশ্বকাপ খেলার চেষ্টা কেন করব না!”