ক্যাটাগরি

হাজী সেলিমের এমপি পদের কী হবে?

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই কিংবা ততোধিক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমি মনে করি এটি তার (হাজী সেলিম) নৈতিক স্খলন। তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন স্পিকার। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রায়ের অনুলিপি পৌঁছে দেবে।”

অন্যদিকে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদ ‘থাকবে’ বলে তার ধারণা।

সংসদ এখন হাজী সেলিমের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইলে সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার মহোদয়। তবে তার আগে রায়ের কপিসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংসদ কর্তৃপক্ষের কাছে আসতে হবে।”

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সংসদ সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো সদস্য দণ্ডিত হলে রায়ের কপি যেমন সংসদে আসতে হয়, তেমনি ওই সদস্য যদি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন, সেই নথিও আসতে হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে যদি রায় স্থগিত হয়, সেটাও সংসদ সচিবালয়কে জানাতে হয়।

সম্প্রতি কুয়েতের আদালতে দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের সদস্য পদ বাতিল করে সংসদ।

দুদকের করা যে ‘অবৈধভাবে সম্পদ’ অর্জনের মামলায় পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিমের সাজা হয়েছে, সেটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর- সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে। পরের বছর ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

পাশাপাশি জ্ঞাত আয় সম্পদ অর্জনে ‘সহযোগিতার’ দায়ে হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

হাজী সেলিম ও তার স্ত্রী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তাদের সাজা বাতিল করে রায় দেয়। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে।

ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাই কোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাই কোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।

সেই শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার একটি ধারায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়।

আর আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডিত হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমের আপিলটি বাতিল করা হয়।

ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী হাজী সেলিম আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপদেষ্টমণ্ডলীতে রয়েছেন। বিগত কমিটিতে তিনি সদস্য ছিলেন। তার আগে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের কমিটিতে থেকেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে ঢাকার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবেই এমপি নির্বাচিত হন।

সম্প্রতি নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে রাস্তায় মারধরের ঘটনায় আলোচনায় আসেন হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম। পরদিন ২৫ অক্টোবর পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটের দেবীদাস লেইনে হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান চালিয়ে ইরফানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও হয়েছে।

র‌্যাবের ওই অভিযানের পর রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় হাজী সেলিমের ‘দখলদারিত্বের’ খবর আসতে থাকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয় তারাও হাজী সেলিমের ‘অবৈধ সম্পদ’ অনুসন্ধানে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।