বয়স হয়ে গেছে ৩৬ বছর। এতদিন যদিও তার ঝলমলে পারফরম্যান্সে সেটা শুধু একটা সংখ্যাই মনে হচ্ছিল। বয়সের ভারে স্বাভাবিকভাবেই গতি কিছুটা কমে এসেছে, কিন্তু অভিজ্ঞতা দিয়ে সামাল দিচ্ছেন ভালোভাবেই। মাঠে সঠিক সময়ে সঠিক পজিশন নিয়ে সাফল্য ঠিকই পাচ্ছেন তিনি। তবে, যে ‘বড় মঞ্চের তারকা’ তকমাটা তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছে তা যেন ফিকে হতে বসেছে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড গোলদাতা তিনি, ১৩৪ গোল। ১১৯ গোল নিয়ে বেশ পেছনে লিওনেল মেসি। এবারের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেও বার্সেলোনার বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন রোনালদো। তার ঝুলিতে আছে প্রতিযোগিতাটির নকআউট পর্বে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও। তাইতো গত সোমবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ইউভেন্তুস কোচ আন্দ্রেয়া পিরলো আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেছিলেন, “এগুলো ক্রিস্তিয়ানোর ম্যাচ।”
কোচ-সতীর্থদের আস্থার প্রতিদান এবার দিতে পারলেন না রোনালদো। মঙ্গলবার রাতে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগের পুরো ম্যাচেই ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। সুযোগ নষ্ট করেছেন বেশ কয়েকটি।
ইউরোপ সেরার মুকুট ইউভেন্তুস সবশেষ জিতেছে সেই ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে। এরপর থেকে কয়েকবার জোর সম্ভাবনা জাগিয়ে খুব কাছাকাছি গেলেও শেষ পর্যন্ত মেলেনি সাফল্য।
৩৩ বছর বয়সী ফুটবলারের জন্য ১০ কোটি ইউরো ট্রান্সফার ফি অনেক, তবে রোনালদোকে তারা ওই চড়া মূল্যেও কিনতে পিছপা হয়নি। তাই নিশ্চিতভাবেই বলে দেওয়া যায়, সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্নেই দলে টেনেছিল ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা।
প্রতিযোগিতাটিতে ইউভেন্তুসের জার্সিতে রোনালদোকে একেবারে ব্যর্থ কিন্তু বলা যাবে না।
২০১৮-১৯ মৌসুমে রিয়াল থেকে ইউভেন্তুসে যোগ দেওয়ার পর দলটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঘরের মাঠে ১০ ম্যাচে ১০ গোল করেছেন ৩৬ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। এসময় প্রতিযোগিতায় ঘরের মাঠে তার চেয়ে বেশি গোল করেছেন কেবল বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি, ১৪টি।
২০১৮-১৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল তারা। আতলেতিকো মাদ্রিদের মাঠে প্রথম লেগে হেরে বসেছিল ২-০ গোলে। তবে, ফিরতি পর্বে রোনালদোর অসাধারণ এক হ্যাটট্রিকেই পরের ধাপে উঠেছিল ইউভেন্তুস। সেই যাত্রা অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; কোয়ার্টার-ফাইনালে আয়াক্সের মাঠে ১-১ ড্রয়ের পর ঘরের মাঠে ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। দুই লেগে দলের দুটি গোলই করেন রোনালদো।
গত আসরেও শেষ ষোলোর প্রথম লেগে অলিম্পিক লিওঁর মাঠে ১-০ গোলে হেরে বসে দলটি। ফিরতি লেগেও শুরুতে গোল খেয়ে চলে যায় খাদের কিনারায়। রোনালদোর জোড়া গোলেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তারা; কিন্তু ২-১ ব্যবধানে জয়ের পরও ছিটকে যায় অ্যাওয়ে গোলে পিছিয়ে।
তবে এসময়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলের তুলনামূলক হিসেবে অনেকটাই ফিকে হয়ে পড়েছে রোনালদোর সংখ্যাগুলো। ইউভেন্তুসের জার্সিতে তিন মৌসুম মিলে এই প্রতিযোগিতায় মোট ১৪ গোল করেছেন তিনি; ২০১৮-১৯ আসরে ছয়টি, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ আসরে চারটি করে। যেখানে রিয়ালে শেষ মৌসুমে তিনি ১৫ গোল করে তিনি ছিলেন প্রতিযোগিতাটির সর্বোচ্চ গোলদাতা।
হতাশার পথচলায় এবার যোগ হতে পারে সেরি আর শিরোপা হারানোও। ইতালিয়ান শীর্ষ লিগে টানা ৯ বারের চ্যাম্পিয়ন ইউভেন্তুস। এর মানে রোনালদো এখানে প্রথম দুই মৌসুমেই পেয়েছেন লিগ সাফল্য। এবার যেটা হুমকির মুখে; উত্থান-পতনের পথচলায় শীর্ষে থাকা ইন্টার মিলানের থেকে ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছে তারা।
২৬ ম্যাচে ৬২ পয়েন্ট শীর্ষে ইন্টার। ৬ পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে এসি মিলান। আর এক ম্যাচ কম খেলে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে ইউভেন্তুস।
তুরিনে এসে লিগ সাফল্য পেলেও একটা শিরোপা এখনও জেতা হয়নি রোনালদোর, ইতালিয়ান কাপ। এবার অবশ্য সম্ভাবনা আছে, আগামী ১৯ মার্চ ফাইনালে আতালান্তার মুখোমুখি হবে তারা।
এবারের সেরি আয় গোলদাতাদের তালিকায়ও এখন পর্যন্ত শীর্ষে আছেন রোনালদো। প্রথমবারের মতো হতে পারেন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতাও।
তারপরও কি খুশি হতে পারবেন তিনি? যে সাফল্যের চূড়ায় থেকে এসেছিলেন ইউভেন্তুসে, সেখান থেকে উল্টো চলা শুরু হয়েছে রোনালদোর? জবাবগুলো তোলা সময়ের হাতে। তবে একটা বিষয় বেশ পরিষ্কারই বলা যায়-তুরিনে আসার পর এই মৌসুম রোনালদোর জন্য সবচেয়ে হতাশাজনক হতে যাচ্ছে, অন্তত পরিস্থিতি বিবেচনায়।