বেড়াতে যান কেনো? এমন প্রশ্নের উত্তরে
অনেকেই বলবেন শহরের যান্ত্রিক পরিবেশ থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য।
সেই উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা দেশের বিভিন্ন অংশে গিয়ে প্রকৃতি দেখে আসি। তবে যেখানে প্রকৃতি
দেখতে যাওয়া সেখানকার পরিবেশটা কতটুকু দেখা হয়? মেশা হয় কি সেই পরিবেশের সঙ্গে?
কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন’স একবারও যাননি
এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে সমুদ্রে মাছ ধরে বেড়ানো মানুষগুলোর সঙ্গে
গল্প করার সুযোগ কজনই বা পেয়েছেন। সিলেটের চা বাগানে বেড়াতে গিয়ে একটি কুঁড়ি দুটি পাতা
যে মানুষগুলো তুলে আনে তাদের সঙ্গে একবেলা ভাত খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল কি কখনও?
শুধু বেড়ানো নয়, নতুন একটি পরিবেশ, সংস্কৃতির
সঙ্গে মেশার অভিজ্ঞতা অর্জন করার ইচ্ছা যাদের আছে তাদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হবে
টাঙ্গাইলের আবিমা গ্রিন কটেজ। বিস্তারিত জানিয়েছেন এই আয়োজনের উদ্যোক্তা মোল্লা সাগর।
প্রায় ২০ বছর ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণের
সঙ্গে জড়িত মোল্লা সাগর। এক প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজে টাঙ্গাইলের মধুপুর অঞ্চলে এসে
এখানকার মানুষের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে তার প্রযোজনার চলচ্চিত্র
‘মান্দিপ’ নিয়ে কাজ করছেন এই অঞ্চলেই। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে যাতায়াতের সুবাদে নিজেদের
থাকার সুব্যবস্থার প্রয়োজন বোধ করেন তারা। পরে সেই চিন্তাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে সমমনা
মানুষদের এই অঞ্চলের আদিবাসিদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে
দিতে চেয়েছিলেন। আর সেই চিন্তা থেকেই সৃষ্টি হয় আবিমা গ্রিন কটেজ।
টাঙ্গাইল মধুপুর বনের পাশে তীরগাছা অঞ্চলে
প্রায় দুই বিঘা জায়গায় এই কটেজ গড়ে উঠেছে। ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল কটেজের দুয়ার খোলার
পরিকল্পনা থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনাভাইরাস মহামারী, কাজও পিছিয়ে যায়।
অবশেষে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সর্ব
সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় আবিমা।
বর্তমানে মোট আটটি মাটির ঘর আছে এখানে।
এর মধ্যে দুটি ঘরে আছে দুটি করে ‘সিঙ্গেল’ বিছানা আর বাকিগুলো একটি করে ‘ডাবল’ বিছানা।
আটটি ঘরের মধ্যে তিনটি ঘর এলাকার মান্দি ও কোচ সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া।
আর বাকি ঘরগুলো একক।
ফলে পুরোপুরি এলাকাবাসির সঙ্গে কাঁধে
কাঁধ মিলিয়ে কটা দিন থাকার সুযোগ যেমন পাওয়া যাবে। পাশাপাশি থাকবে ব্যক্তিগত দূরত্ব
বজায় রাখার সুযোগও। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের ব্যবস্থা এখানে নেই।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে দূরত্ব ১৫৫ কিলোমিটার। নিজস্ব
যানবাহন নিয়ে যেতে পারবেন, কটেজের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা আছে, আছে চালকদের জন্য আলাদা
থাকার ব্যবস্থা।
গণপরিবহনে যেতে চাইলে রাজধানীর টেকনিক্যাল
কলেজ মোড় এবং মহাখালি আমতলি থেকে টাঙ্গাইলগামী যেকোনো বাসে উঠে তিন থেকে চার ঘণ্টা
সময়েই পৌঁছে যেতে পারবেন মধুপুর শহরে।
সেখানেই অতিথিদের জন্য অপেক্ষা করবে আবিমা
গ্রিন কটেজের নিজস্ব যানবাহন। ঢাকা থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের ভাড়া পাঁচশ টাকা,
সাধারণ বাস ভাড়া দুইশ টাকা।
প্যাকেজ
দুজন মানুষের জন্য থাকা ও তিন বেলা খাওয়াসহ
একটি কটেজের জন্য খরচ হবে পাঁচ হাজার টাকা। তিনবেলার খাবারে তাদের নির্ধারিত খাবারের
তালিকা থেকে বেছে নিতে পারবেন পছন্দের খাবার।
এছাড়াও মান্দি ও কোচ সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন
খাদ্যাভ্যাসের স্বাদও নিতে পারবেন কটেজে বসেই। তবে তার জন্য বাড়তি খরচ করতে হবে।
অক্টোবর, নভেম্বর মাসে গেলে মান্দি সম্প্রদায়ের
বিভিন্ন উৎসব উপভোগ করার সুযোগ পাবেন। কটেজের সময়সীমা দুপুর ১২টা থেকে পরদিন দুপুর
১২টা।
যারা দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চান তাদের
জন্য জনপ্রতি দেড় হাজার টাকার প্যাকেজ থাকছে আবিমা গ্রিন কটেজে। এই প্যাকেজের আওতায়
থাকবে ‘পিক আপ’ ও ‘ড্রপ অফ সার্ভিস’, লোক সংখ্যা অনুযায়ী থাকবে কটেজে বিশ্রামের ব্যবস্থা,
সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও সন্ধ্যার নাস্তা।
বুকিং প্রক্রিয়া
গ্রামের পরিবেশ, স্থানীয়দের সংস্কৃতি,
জীবনযাত্রাকে সম্মান জানিয়ে তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে কয়েকটা দিন কাটানোর মতো মন-মানসিকতা
যাদের আছে তাদের জন্যেই আবিমা গ্রিন কটেজ হবে আদর্শ। আর এমন মন-মানসিকতার অতিথিরাই
মালিকপক্ষের কাম্য। তাই হুট করে চলে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
যাওয়ার কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে কটেজে ফোন
করে বুকিং দিতে হবে। স্থান সঙ্কুলান এবং মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতেই এখানে
বেড়ানো সুযোগ পাওয়া যাবে।