ক্যাটাগরি

শিব চতুর্দশীতে সরব চন্দ্রনাথ ধাম

ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা
পালনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সমবেত হলেও এবার বিশ্ব বৈদিক সম্মেলনের
আয়োজন করা হয়নি।

আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার
আয়োজন না থাকলেও লোক সমাগম ঘিরে গ্রামীণ মেলা বসেছে সেখানে।

তবে আয়োজকরাও বলছেন,
এবারের জন সমাগম অন্য বছরের চেয়ে কম। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া তিনটা থেকে শিব চতুর্দশী
তিথি শুরু হয়েছে।

সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ
ধাম ও আশপাশের এলাকায় সকালে পুণ্যার্থীদের আনাগোনা কম ছিল। কিন্তু শিব চর্তুদশী তিথি
শুরু আগে দুপুর থেকে পুনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন
বয়সী মানুষ সমবেত হন। বিকালে ভিড় আরও বেড়ে যায়।

ব্যস কুণ্ড, পুণ্য
পুকুর, রাম সীতা মন্দির, সীতা কুণ্ড ঘিরে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষের ভিড়।

সিঁড়ি বেয়ে প্রায় ১২০০
ফুট উঁচুতে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় দেবতা শিবের মন্দিরের দিকে শুরু হয় পুণ্যার্থীদের
যাত্রা।মন্দিরে যাওয়ার আগে ব্যাস কুণ্ডে স্নান করেন ভক্তরা। তারপর পাহাড় চূড়ায় পূজা
ও শিব লিঙ্গে অর্ঘ্য দেন।

চন্দ্রনাথ মন্দিরের
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী হাজার হাজার পুণ্যার্থী সিঁড়ি বেয়ে ওপরে দিকে
উঠছেন।

পুণ্যার্থী নারী নয়ন
সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুমিল্লা থেকে এসেছি। প্রতিবছর তীর্থ করতে
শিব চতুর্দশীতে এখানে আসি।”

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর
থেকে আসা ঝুমা বলেন, “পুণ্য লাভের আশায় পূজা দিতে পরিবারের লোকজন নিয়ে এসেছি।”

বিভিন্ন মন্দিরে পূজা-অর্চনা
করলেও ভক্তদের কাছে মূল আকর্ষণ থাকে পাহাড়ের চূড়ার চন্দ্রনাথ মন্দিরে। ভক্তদের অনেকেই
পুণ্যস্নানে নিজেকে পবিত্র করে নেন চূড়ায় ওঠার আগে।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের
এই তীর্থ স্থানে চন্দ্রনাথ মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির, বীরুপাক্ষ মন্দির, ভোলানাথ গিরি
সেবাশ্রম, দোল চত্বর, শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দির ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন ভক্তরা।

এখানকার সার্বিক ব্যবস্থাপনার
দায়িত্বে থানা সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ বলেন, বৈদিক সম্মেলন
এবার না হলেও প্রায় লাখখানেক লোক সমাগম হয়েছে।

“পুণ্য লগ্নে শিব পূজা
দিতে সবাই আসেন। জন সমাগম ঘিরে আশপাশে যে দোকানপাট বসে সেটাই মেলা। মন্দিরে প্রবেশের
জন্য লাইন ও গেট, চলাচলের সিঁড়ি, স্নানের জন্য পুণ্য পুকুরে নতুন সাতটি ঘাট, ৪২টি নতুন
শৌচাগারসহ সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও যেহেতু প্রচুর লোক সমাগম হয় তাই হয়ত সবকিছু
ঠিকঠাকভাবে করা খুব কঠিন।”

চন্দন দাশ জানান, স্বেচ্ছাসেবক,
স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ উপ-কমিটিগুলো ব্যবস্থাপনার সব কাজে সহযোগিতা করছেন।

“বৃহস্পতিবার রাত্রিযাপন
এবং শুক্রবারেও লোক সমাগম থাকবে। শনিবার থেকে মানুষ কমবে।”

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে
সিসি ক্যামরার মাধ্যমে সব কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে জাতি-বর্ণ
নির্বিশেষে সব ধরণের মানুষ আসে। এখানকার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মন্দিরগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
চলে গিয়েছিল। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সংস্কার করেছি। মন্দিরগুলো জাতীয় সম্পদ। তীর্থ
যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জাতীয় এসব স্থাপনার দিকে সবাই যেন নজর রাখে।” 

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের
সবচেয়ে বড় মেলাগুলোর মধ্যে একটি সীতাকুণ্ডের শিব মেলা। 

প্রতিবছর শিব চতুর্দশী
মেলা উপলক্ষ্যে শিবরাত্রি ব্রত পালন ও শিব লিঙ্গে অর্ঘ্য নিবেদন পুণ্যার্থীরা জড়ো হন
জায়গাটিতে।