চোট আর অসুস্থতা আমিনুলকে
দাঁড় করিয়েছে এই বাস্তবতার মুখোমুখি। ২১ বছর বয়সী লেগ স্পিনার অবশ্য পিছু হটছেন না।
জীবন যুদ্ধ তাকে শিখিয়েছে ক্যারিয়ারে এই সব চড়াই-উৎরাই সামলে এগিয়ে যেতে।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি
দলের মোটামুটি নিয়মিত সদস্যই হয়ে উঠছিলেন আমিনুল। কোভিডের প্রকোপে অন্য সবার মতো থমকে
যেতে হয় তাকেও। বিপত্তির শুরু কোভিড বিরতির পর হওয়া প্রেসিডেন্ট’স কাপ ওয়ানডেতে। গত
অক্টোবরে ওই আসরে খেলার সময় টান পড়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে। ৩ ম্যাচ খেলেই শেষ তার টুর্নামেন্ট।
এরপর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি
কাপ, যে সংস্করণ তার আপন। কিন্তু এখানেও সঙ্গী হতাশা। খেলতে পারলেন মোটে ১ ম্যাচ!
ক্রিকেটীয় চোট টুকটাক
ছিল। তবে ঝামেলা পাকিয়েছে রোগ। টনসিলের সমস্যা প্রচণ্ড ভুগিয়েছে। সেরে উঠতে অস্ত্রোপচার
করাতে হয়েছে। ছিল শ্বাসকষ্টও।
জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে আমিনুল।
নিউ জিল্যান্ড সফরের
জন্য দল ঘোষণার সময় সেরে ওঠার পথে ছিলেন। কিন্তু তাসমান সাগর পাড়ের দেশটিতে প্রচণ্ড
ঠাণ্ডায় সমস্যা বাড়তে পারে ভেবে নেওয়া হয়নি তাকে।
ক্রিকেটীয় চোটে মনকে
বোঝানো যায়। এরকম অসুস্থতার কারণে দলের বাইরে থাকা কঠিন। আমিনুল তবু নিয়তি মেনে নিয়ে
সামনে তাকিয়ে আছেন আশাভরে।
“প্রেসিডেন্ট’স কাপ
ওয়ানডেতে খেলার সময় যে চোট পেয়েছিলাম, টুর্নামেন্টের পর ৮-৯ দিন সময় লেগেছিল সেটা থেকে
সেরে উঠতে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা আর নাই। এখন পুরোপুরি সুস্থ আছি।”
“কোথায় খেলব, সেটা তো
আমার হাতে নেই। যেখানেই খেলি, আমি সব সময়ই ভাবি, নিজের শতভাগ দিতে পারছি কি না। নিজের
শতভাগ দেওয়াটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর যদি কোথাও সুযোগ আসে, সেখানে নিজের
সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করব।”
নিউ জিল্যান্ড ভুলে
আপাতত তিনি মনোযোগ দিচ্ছেন আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে সিরিজের দিকে। বিসিবি ইমার্জিং
দলের সঙ্গে আছেন। তবে প্রথম চার একদিনের ম্যাচে একাদশে সুযোগ মেলেনি। আরেকটি ম্যাচ
আছে। এরপর আছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
আমিনুল জানেন, তার সুযোগও
আসবে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য।
“পেশাদার ক্রিকেটার
হিসেবে এগুলো মেনেই ক্রিকেট খেলতে হবে। যখন সুযোগ আসবে না, তখন নিজেকে প্রস্তুত রাখতে
হবে। সবসময় এভাবেই চিন্তা করি।”
বয়সভিত্তিক দলে সবাই
সম্ভাবনায় ব্যাটসম্যান আমিনুলকেই এগিয়ে রাখতেন। সঙ্গে লেগ স্পিন ছিল মোটামুটি কার্যকর।
হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের সেই সময়ের প্রধান কোচ সাইমন হেলমট মুগ্ধ ছিলেন আমিনুলে। তরুণ
এই ব্যাটসম্যানের মধ্যে দেখেছিলেন টেস্টে দেশের হয়ে চার নম্বরে ব্যাট করার সম্ভাবনা।
পরে তার চোখেই ধরা পড়ে
এই তরুণের আরেকটি বিশেষত্ব। আমিনুলের মাঝে তিনিই প্রথম দেখেন বাংলাদেশে লেগ স্পিনারের
খরা কাটানোর সম্ভাবনা। নজর রাখতে বলেন নির্বাচকদের। এরপরই বদলে যেতে থাকে আমিনুলের
ক্যারিয়ারের গতিপথ।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে
আচমকাই আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে একটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে আমিনুলকে খেলানো
হয়। সেই ম্যাচে ১০ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।
ওই বছরের সেপ্টেম্বরে
ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে জাতীয় দলের নেটে তাকে আনা হয়েছিল আফগান লেগ স্পিনারদের
খেলার প্রস্তুতির জন্য। আমিনুলকে হাইপারফরম্যান্স ইউনিটের হয়ে ভারতে পাঠানোর পরিকল্পনা
ছিল নির্বাচকদের। কিন্তু জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর চাওয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজের
দলে তাকে রাখেন মিনহাজুলরা।
টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকে
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৮ রানে ২ উইকেট নেন আমিনুল। সেই ম্যাচেই হ্যামিল্টন মাসাকাদজার
শট ফেরাতে গিয়ে বাঁ হাতে পড়ে তিনটি সেলাই। পরে ভালো করেন ভারতেও। খারাপ করেননি গত বছর
পাকিস্তান সিরিজেও। ২০২০ সালে সবশেষ খেলেন দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে
৩৪ রানে নেন ৩ উইকেট। সব মিলিয়ে ৭ টি-টোয়েন্টিতে তার শিকার ১০ উইকেট।
আমিনুলের বোলিংয়ে নিবিড় মনোযোগ রাখছেন স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেটোরি।
আপাতত দেশের হয়ে কেবল
টি-টোয়েন্টিই খেলছেন আমিনুল। তবে বুকের গভীরে টেস্ট খেলার স্বপ্ন ঠিকই আছে।
“ক্রিকেট যারা খেলে,
তাদের সবারই এই স্বপ্নটা থাকে। দেশের হয়ে টেস্ট খেলার, লাল বলে খেলার স্বপ্ন আমারও
আছে। যদি কখনও ডাক পাই, কখনও খেলার সুযোগ আসে, নিজের সর্বোচ্চটাই দেব।”
আশার ঝিলিক হয়ে আসা
এই তরুণের সামনে চ্যালেঞ্জ এখন সম্ভাবনার পূর্ণ আলো ছড়ানো। টিকে থাকার লড়াই কতটা কঠিন,
তার জানা আছে। লম্বা সময় দেশের হয়ে খেলে যেতে হলে প্রতিনিয়ত উন্নতি করে যেতে হবে। ভাণ্ডারে
যোগ করতে হবে নতুন সব অস্ত্র। সেভাবে নিজেকে তৈরি করারও চেষ্টা করছেন। মহামারীকালে
গুগলি, ফ্লিপারের মতো বৈচিত্র্য যোগ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
ছোট্ট ক্যারিয়ারে এর
মধ্যেই বেশ কবার ভুগতে হয়েছে চোটের জন্য। তাতে দমে যাননি আমিনুল। জীবনের ময়দানে সংগ্রাম
তাকে কম করতে হয়নি, সেই শিক্ষা কাজে লাগছে ক্রিকেটের আঙিনায়ও। তিনি হাল ছাড়তে জানেন
না, সেটা যেমন মাঠে, তেমনি মাঠের বাইরেও।
“যেমন পরিবার থেকে উঠে
এসেছি, অনেক কিছুই দেখেছি। জীবনে উত্থান-পতন থাকবেই। এগুলো সামলে নিয়েই জীবনে চলতে
হয়। এতে আমি অভ্যস্ত, এগুলো হবেই। ইতিবাচকভাবে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”