চলতি বছরের শুরু থেকে চট্টগ্রামে মশার উপদ্রব সীমা ছাড়িয়েছে। দিনে-রাতের যে কোনো সময় মশার কামড় থেকে রক্ষা নেই।
এদিকে মশা মারতে যে ওষুধ ছিটায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি), তার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
সিটি করপোরেশন বলছে, নগরীতে চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খাল-নালায় দেওয়া অস্থায়ী বাঁধের কারণে মশা বাড়ছে। আপাতত খাল-নালা পরিষ্কারে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
কিন্তু তাতে যে কাজ তেমন কিছু হচ্ছে না, তা বোঝা যায় গোয়ালপাড়া এলাকার বাসিন্দা অমিত ঘোষের কথায়।
বিডিনিউজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার কাকাতো ভাইয়ের বয়স ১৬ মাস। দিনের বেলায়ও মশার এত উপদ্রব যে বেশিরভাগ সময় মশারি খাটিয়ে ওকে রাখতে হয়। তারপরও সারা গায়ে মশার কামড়ের দাগ।”
রহমতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা রফিকুল আলম বললেন, শুধু বাসাবাড়িতে নয়, নগরীর পাড়া মহল্লার সড়ক ও মোড়গুলোতেও মশার উৎপাত মাত্রা ছাড়া।
“চেরাগী পাহাড় মোড়ে সন্ধ্যার পর দাঁড়ানো দায়। মাঝে মাঝে সেখানে আড্ডা দিতে যেতাম। কিন্তু মশার কামড়ে বিরক্ত হয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।”
সোমবার অসুস্থ ভাইকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গিয়েছিলন হালিশহরের বাসিন্দা রাশেদুল হক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসায় তো মশার জ্বালা আছেই। হাসপাতালেও একই অবস্থা দেখলাম। এমনিতেই গাদাগাদি রোগী। তারমধ্যে সন্ধ্যার পর থেকে মশার কামড়ে অস্থির অবস্থা।”
জামালখান এলাকার বাসিন্দা শৈবাল পারিয়াল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত দিনের বেলায় মশা কম ছিল। এখন দিনে রাতে ‘সমান’। জানুয়ারি থেকেই মশা বাড়ছে। কয়েল জ্বালিয়েও কিছু হচ্ছে না।
“মশার ওষুধ ছিটাতে গত দুই মাসে কেউ এ এলাকায় আসেনি। এলাকার খাল-নালাও পরিষ্কার হয়নি।”
২৭ ফেব্রুয়ারি নগরী ভেলুয়ার দিঘী মহাশ্মশানে মৃত এক আত্মীয়কে দাহ করতে গিয়েছিলেন সুকান্ত বিশ্বাস। সেখান থেকে তিনি ফিরেছেন মশার বিভীষিকা নিয়ে।
“শ্মশানে চার ঘণ্টার মত ছিলাম। দাঁড়ানো মাত্র শত শত মশা ঘিরে ধরে কামড়াতে থাকে। ভয়ঙ্কর অবস্থা।”
মির্জাপুল এলাকার বাসিন্দা পরিবেশ কর্মী সৈয়দ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে ওষুধে মশা মরবে সেই ওষুধ ছিটাতে হবে। ঠিকমত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে কিনা তা যেন মনিটর করেন মেয়র।
নগরীর বেশ কয়েকটি খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ চলছে। এজন্য খালের ভিতর অস্থায়ী বাঁধ এবং প্রতিরোধ দেয়াল দেওয়া হয়েছে।
এগুলোর কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জমে থাকা পানিতে ময়লা আর্বজনাও আটকে আছে। এছাড়া বিভিন্ন খালে বাসাবাড়ির আর্বজনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
নগরীর চাক্তাই খাল, পাথরঘাটার কলাবাগিচা খাল ও টেকপাড়া খাল, পাহাড়তলির গয়নাছড়া খাল, মহেশখালী খাল, চশমা খালে এ চিত্র দেখা গেছে।
সিটি করপোরেশন মশা মারার জন্য অ্যাডাল্টিসাইড (উড়ন্ত মশা মারার ওষুধ) এবং লার্ভিসাইড (লার্ভা মারার ওষুধ) ব্যবহার করে।
এখন লার্ভিসাইড ছিটানো হলেও ওষুধ স্বল্পতার কারণে অ্যাডাল্টিসাইড ছিটানো হচ্ছে না বলে জানান সিটি করপোরেশনের একজন কর্মমকর্তা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অ্যাডাল্টিসাইড হিসেবে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তার মান নিয়ে আমি নিজেই প্রশ্ন তুলেছি। ঢাকায় মশা মারতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেটা খবর নিতে বলেছি।”
মশা নিয়ন্ত্রণে খাল-নালা পরিষ্কার এবং ওষুধ ছিটানোর উপর জোর দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশা মারতে পরিচ্ছন্নতার ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নেওয়া হয়েছে।
“জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য দেওয়া বাঁধের কারণে খাল-নালাগুলোর বিভিন্ন স্থানে পানি চলাচল বন্ধ। পানি জমে থাকায় ওষুধ ছিটানোর পরও মশার উৎপাদন বাড়ছে। তিন মিটারের চেয়ে বড় নালাগুলো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সিডিএ-এর হলেও সবাই সিটি করপোরেশনের কথাই বলে। পরিচ্ছন্নতা বিভাগকে বলেছি খাল-নালা পরিষ্কার করতে, যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।”
এছাড়া বিভিন্ন খালে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা অপসারণে করপোরেশনের কর্মচারীদের নিয়ে ‘চেষ্টা করছেন’ বলে জানান মেয়র রেজাউল।